রুশ নেতা নাভালনির মুক্তি দাবি করল যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ

রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি দেশ।

>>রয়টার্স
Published : 18 Jan 2021, 12:14 PM
Updated : 18 Jan 2021, 12:36 PM

গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়ে রোববার জার্মানি থেকে নিজ দেশ রাশিয়ায় ফিরে মস্কো বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই আটক হন নাভালনি।

গত বছর বিষপ্রয়োগে অসুস্থ হয়ে পড়ার পাঁচ মাস পর এই প্রথম রাশিয়ায় ফিরেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নেতা নাভালনি।

তাকে আটক করার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ। রাশিয়া সঙ্গে সঙ্গেই এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

নাভালনিকে আটকে রাখার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু বলেনি। তবে ইইউ’র কিছু দেশ খুব দ্রুতই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ চাইছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রাশিয়া কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা তাদের সমালোচকের (নাভালনি) মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। নাভালনিকে ‘অবিলম্বে এবং নি:শর্তে মুক্তি’ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

রাশিয়ায় নাভালনিকে রাজধানী মস্কোর একটি পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের একটি মামলায় স্থগিত দণ্ডের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে নাভালনিকে আটক করে কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার কারা বিভাগ।

আদালতের কোনও আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত নাভালনিকে কাস্টডিতেই রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নাভালনির আইনজীবীরা বলছেন, তাদেরকে মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হবু জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, “নাভালনিকে নিয়ে ক্রেমলিন যা করছে তা কেবল মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয় বরং রুশ জনগণের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিয়ে তাদেরকে অপমান করারই সামিল।”

ইইউ থেকেও এসেছে কড়া প্রতিক্রিয়া। জার্মানি বলেছে, নাভালনিকে আটকের পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না। যুক্তরাজ্য এ পদক্ষেপকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে বর্ণনা করেছে। “নাভালনিকে হয়রানি করার চেয়ে রাশিয়ার উচিত তাদের দেশের মাটিতে রাসায়নিক অস্ত্র কিভাবে ব্যবহার হল সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা”, বলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব।

এমনই নানা নিন্দা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, ব্রিটেন এমনকী ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডার লিনও অবিলম্বে নাভালনির মুক্তি দাবি করেছেন। লিথুনিয়া শিগগিরিই ইইউ’কে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাবে বলে জানিয়েছে।

চেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, তিনি চান ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে আলোচনা শুরু করুক। তবে রাশিয়া সব আন্তর্জাতিক আলোচনা-সমালোচনা ঝেড়ে ফেলে এবং নাভালনিকে মুক্তির দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছে, “তাদের উচিত নিজের চরকায় তেল দেওয়া।”

 রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক আইনকে শ্রদ্ধা করুন। কোনও সার্বভৌম দেশের জাতীয় বিধিবিধানে হস্তক্ষেপ করবেন না। আপনাদের নিজ নিজ দেশের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান।”

৪৪ বছর বয়সী নাভলনি গত বছর অগাস্টে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে সার্বিয়া থেকে মস্কো ফেরার সময় এককাপ চা পানের পরই অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

 অবস্থার পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষায় জানায় যায়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট নোভিচক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।

নাভালনি ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, রুশ সরকার বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাকে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মারার চেষ্টা করা হয়।

অবশ্য ক্রেমলিন ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে। পুতিন বলেছেন, যদি রুশ এজেন্টরা তাকে হত্যা করতেই চাইত, ‍তবে ‘তারা অবশ্যই তাদের কাজ শেষ করত’।

বার্লিনের একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন নাভালনি। তার স্বাস্থ্যও প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। এরপরই গত বুধবার নিজের ইন্সটাগ্রামে এক পোস্টে রাশিয়ায় ফেরা এবং পুনরায় রাজনীতি শুরুর কথা জানানোর পর রোববার দেশে ফেরেন এই নেতা।