ফের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, দ্বিতীয় সংক্রমণ ‘বেশি তীব্র’

যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুই দফা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন; এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় তার সংক্রমণের মাত্রা প্রথমবারের চেয়ে বেশি তীব্রতর ও বিপজ্জনক ছিল বলে চিকিৎসকদের দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2020, 10:26 AM
Updated : 13 Oct 2020, 10:38 AM

তার ফুসফুস শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় ২৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছিল।

কোথাও কোথাও করোনাভাইরাসে পুনঃসংক্রমিত হওয়ার কয়েকটি ঘটনার কথা জানা গেলেও বিষয়টি এখনও বিরল।

দুইবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি এখন সুস্থ হলেও ভাইরাস ঠেকাতে শরীরে কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা দরকার, ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নিয়ে ল্যানসেট ইনফেকশন ডিজিজের করা গবেষণায় সে প্রশ্ন উঠেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে নেভাদার ওই বাসিন্দার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়ও এমন কোনো ঘাটতি ছিল না যাতে তাকে কোভিড-১৯ এর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা যায়।

বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রথম ওই ব্যক্তির শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গগুলোর মধ্যে গলা ব্যথা, কাশি, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া ছিল।   

১৮ এপ্রিল তার দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ২৭ এপ্রিল সব উপসর্গ দূর হয়ে যায়। এরপর ৯ ও ২৬ মে দুই দফায় শনাক্তকরণ পরীক্ষায় তার দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি।

২৮ মে থেকে তার ফের গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, কাশি, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া শুরু হয়। ৫ জুন দ্বিতীয়বার তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয় এবং রক্তে অক্সিজেনের উপস্থিতি কম বলে জানা যায়।

ভাইরাস শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থেকে পরে আবার দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে ফিরে এসেছিল, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে নেভাদার ওই ব্যক্তি যে দুইবারই আলাদা আলাদাভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা তা নিশ্চিত করেছেন।

আক্রান্ত হওয়ার পর প্রত্যেকবার ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাসের যেসব নমুনা নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর জেনেটিক কোড তুলনা করে বিজ্ঞানীরা এ কথা বলেছেন।

“আগের সংক্রমণ যে আপনাকে ভবিষ্যৎ সংক্রমণ থেকে রক্ষা নাও করতে পারে, আমাদের অনুসন্ধান সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। পুনঃসংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কোভিড-১৯ এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে আমাদের যে ধারণা তার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে,” বলেছেন নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মার্ক পানদোরি।

এ কারণে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদেরও সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার নির্দেশনা মেনে চলা উচিত বলে মত তার।

বিজ্ঞানীরা এখন করোনাভাইরাস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কের ইস্যু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সবারই কী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে? যাদের মৃদু উপসর্গ ছিল, তাদেরও? এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন থাকবে? এসব প্রশ্নের উত্তরের উপরই করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বুঝতে এবং প্রতিষেধক ও হার্ড ইমিউনিটি সংক্রান্ত ধারণার বিকাশে সহায়তা করবে, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

এখন পর্যন্ত একাধিকবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের ঘটনা বেশ বিরল; বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত যে ৩ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

হংকং, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে করোনাভাইরাসে দুইবার আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির খোঁজ মিললেও তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের সংক্রমণ প্রথমবারের চেয়ে তীব্রতর ছিল না। একুয়েডরে একজনের ক্ষেত্রে নেভাদার ২৫ বছর বয়সী ব্যক্তির মতোই দ্বিতীয় দফার সংক্রমণকে ‘বেশি গুরুতর’ বলা হয়েছিল; যদিও দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির বাসিন্দাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। 

বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, এখনও মহামারীর প্রাথমিক পর্যায় চলছে, যে কারণে সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা এখনি পাওয়া যাবে না। দেশে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ যত দীর্ঘায়িত হবে, পুনঃসংক্রমণের চরিত্রও তত স্পষ্ট হবে।

প্রথম দফায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর যেহেতু ভাইরাসের সঙ্গে লড়ার কৌশল শিখে নেয়, সুতরাং দ্বিতীয় দফায় কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার তীব্রতা কম হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল।

নেভাদার ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কেন দ্বিতীয়দফায় সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কারও কারও মতে, দ্বিতীয়বার ওই ব্যক্তির শরীরে সম্ভবত প্রথমবারের তুলনায় অনেক বেশি ভাইরাস আক্রমণ করেছিল। আবার প্রথমবার ভাইরাস ঠেকাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যে প্রতিক্রিয়া, তা-ই দ্বিতীয় দফায় পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল। 

ডেঙ্গু জ্বরের মতো বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও এমনটা যায়। এক প্রজাতির ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এন্টিবডি অন্য প্রজাতির ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণের সময় জটিলতা সৃষ্টি করে। 

নেভাদার ওই ব্যক্তির পুনঃসংক্রমণের ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের ব্যবধান এবং দ্বিতীয়বারের তীব্রতাকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইস্ট আংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল হান্টার।

“এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৭০ লাখেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। যদি দ্রুতই পুনঃসংক্রমণের ঘটনা ঘটতো এবং দ্বিতীয়বারের সংক্রমণ আরও তীব্র হতো তাহলে এ ধরনের আরও ঘটনার কথা শুনতে পেতাম আমরা। এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষেধক কর্মসূচি নিয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়,” বলেছেন হান্টার। 

“কিন্তু আমরা যে এখনও করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাল্টায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে তেমন কিছুই জানি না, এই গবেষণা সে বিষয়টিই পুনরায় জানাচ্ছে,” বলেছেন তিনি।