যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর এড়াতে অ্যাসাঞ্জের আইনি লড়াই শুরু

অপরাধের অভিযোগে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর এড়াতে লন্ডন আদালতে আইনি লড়াইয়ে নামা উইকিলিকস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মামলার শুনানি কয়েকমাস দেরীর পর শুরু হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2020, 04:42 PM
Updated : 7 Sept 2020, 04:42 PM

গত ফেব্রুয়ারিতে এ মামলার শুনানি শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পিছিয়ে গিয়েছিল। সোমবার থেকে তা শুরু হল।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।

ওই সব নথির মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচর আইন লঙ্ঘন ও সরকারি কম্পিউটারে হ্যাকিংসহ ১৮টি অভিযোগ এনেছে। দোষ প্রমাণিত হলে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে কয়েক দশক কারাগারে কাটাতে হতে পারে।

অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই চাপ প্রয়োগ করে আসছে। গত জুনে দেশটি তার বিরুদ্ধে ‘সুপারসিডিং ইনডিক্টমেন্ট’ জারি করে।

অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা মনে করেন, উইকিলিকস ওই গোপন নথিগুলো প্রকাশ করে আধুনিক রাষ্ট্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের স্বরূপ উন্মোচন করেছে। এ ফাঁসের ঘটনাকে মতপ্রকাশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবেও উল্লেখ করেন তারা।

মার্কিন কূটনীতিক ও সামরিক নথি ফাঁসের পরপরই অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে ধর্ষণ মামলা হয়। ওই মামলায় বহিঃসমর্পণ এড়াতে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা ২০১২ সালে জামিনের শর্ত অগ্রাহ্য করে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। টানা সাত বছর তিনি ওই দূতাবাসেই অবস্থান করেছিলেন।

কিন্তু গত বছর এপ্রিলে একুয়েডরের মার্কিনঘনিষ্ঠ সরকার লন্ডনে তাদের দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে বের করে দিলে যুক্তরাজ্য পুলিশ জামিনের শর্ত লংঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে এবং বিচারে তার ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড হয়।

ওই বছর জুনে লন্ডনের একটি আদালত অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরুর দিন ঠিক করে দেন। তখন আদালত বলেছিল, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুনানি শুরু হবে। কিন্তু ২০২০ সালের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।

যুক্তরাজ্যেও এই ভাইরাস থাবা বিস্তার করে। লকডাউনের কারণে অফিস-আদালতের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

সোমবার ৪৯ বছরের অ্যাসেঞ্জ দাড়ি কামিয়ে এবং স্যুট পরে কেতাদুরস্ত হয়ে আদালতে আসেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করার আবেদন জানান।

শুনানিতে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে আমার মক্কেল যুক্তরাষ্ট্রে ন্যায় বিচার পাবেন না।”

যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে অ্যাসাঞ্জ আত্মহত্যা করতে পরেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে বিচারে সব অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে অ্যাসাঞ্জের সর্বোচ্চ ১৭৫ বছরের জেল হতে পারে।

অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে এখনও কারাগারেই আছেন এবং সেখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।