নাভালনি: রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ইইউ ব্যবস্থা চায় জার্মানি

রুশ বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে বিষপ্রয়োগের ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কঠোর ব্যবস্থা চায় জার্মানি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 06:47 PM
Updated : 4 Sept 2020, 05:56 AM

বিবিসি জানায়, জার্মানির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নবার্ট রেটগন ইইউ-কে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ইইউ এমন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়বে বলেও রেটগন সতর্ক করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে রাশিয়া থেকে জার্মানি সরাসরি গ্যাস নেওয়ার যে চুক্তি করেছে তা আরেকবার ভেবে দেখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

জার্মান সরকার বুধবার নাভালনি বিষাক্ত রাসায়নিক নোভিচক নার্ভ এজেন্ট হামলার শিকার হয়েছেন বলে নিশ্চিত করার পর রাশিয়া সরকার ব্যাপক নিন্দা-সমালোচনার মুখে পড়েছে।

জার্মানির বার্লিনে একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে নাভালনির চিকিৎসা করা হচ্ছে।

গত ২০ অগাস্ট রাশিয়ার একটি অভ্যন্তরীন ফ্লাইটে সাইবেরিয়ার তমস্ক থেকে রাজধানী মস্কো যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নাভালনি। তার সমর্থকদের ধারণা, তমস্ক বিমানবন্দরে নাভালনি চা পানের আগেই তার পানীয়তে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অসুস্থ নাভালনিকে নিয়ে তার ফ্লাইট সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। ওই শহরেরই একটি হাসপাতালে তাকে প্রথম চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।পরে কোমায় থাকা নাভালনিকে চিকিৎসার জন্য বার্লিনে নেওয়া হয়।

বুধবার জার্মান সরকারের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, “জার্মানির সামরিক পরীক্ষাগারে টক্সিকোলোজি পরীক্ষায় নাভালনির দেহে নোভিচক নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগের সন্দেহাতীত প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

পরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলও বলেন, নাভালনিকে সোভিয়েত-ধাঁচের নোভিচক নার্ভ এজেন্ট দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। এর জবাবে কী করা হবে তা ঠিক করতে নেটো জোটের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

এর মধ্যেই আঙ্গেলার শীর্ষ মিত্র এবং জার্মান পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নবার্ট ইইউ-কে পদক্ষেপ নেওয়ার ওই দাবি জানালেন। কড়া ভাষায় রাশিয়ার নিন্দাও করেছেন তিনি।

নিষেধাজ্ঞার চাপ:

রাসায়নিক অস্ত্র নিরোধ সংস্থা বা ওপিসিডব্লিউ বলছে, কোনও মানুষকে বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট দেওয়াটা তার ওপর নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের সামিল বলেই গণ্য হবে।

ওদিকে, ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, নাভালনিকে বিষপ্রয়োগের জন্য কে বা কারা দায়ী সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসার পর তারা কেবল রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

তবে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, রাশিয়া নাভালনির ঘটনাটির পরিস্কার ব্যাখ্যা দিচ্ছে কি-না তার ওপরই দেশটির বিরুদ্ধে জার্মানি কিংবা ইউরোপের কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে।

আঙ্গেলা মের্কেল এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস নিতে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন চালু না করার জন্য দেশের অভ্যন্তরে চাপের মুখে পড়েছেন।

জার্মান পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নবার্ট রেটগন রেডিওতে বলেছেন, জার্মানি কঠিন রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে তার ভাষাতেই সমুচিত জবাব দেওয়া উচিত।

নর্ড স্টি্রম ২ গ্যাস পাইপলাইনের কাজ এখনই সম্পন্ন হয়ে গেলে প্রকারান্তরে পুতিনকে তার অপরাজনীতি চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করা হবে বলে জার্মান টিভিতে মন্তব্য করেছেন রেটগন।

নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন চালু হলে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইনের তুলনায় দ্বিগুণ গ্যাস সরবরাহ রাশিয়া থেকে সরাসরি পাবে জার্মানি।

পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে মিলে এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ করছে রাশিয়ার গ্যাজপ্রোম কোম্পানি। প্রকল্পের ৯০ শতাংশই সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি বন্ধ করা কঠিন হতে পারে। খোদ ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বিষয়টি নিয়ে বিভক্তি আছে।

ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি পেসকভ বলছেন, এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে রাশিয়া, জার্মানি এবং ইউরোপ সবপক্ষই উপকৃত হবে। তাই পাইপলাইন বন্ধের চেষ্টা নিয়ে আলোচনা করা আবেগতাড়িত ব্যাপার বলেই মনে করে ক্রেমলিন।

তাছাড়া, কোনওরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপর কী কারণ থাকতে পারে রাশিয়ার তা বোধগম্য নয় বলেও পেসকভ মন্তব্য করেছেন।