এবার নিউ ইয়র্কে কৃষ্ণাঙ্গকে ‘শ্বাসরোধে হত্যার’ অভিযোগ

উইসকনসিনের কেনোশায় পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তির আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে অস্থিরতার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নিউ ইয়র্কে নিরস্ত্র একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে ‘শ্বাসরোধে হত্যার’ অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 11:20 AM
Updated : 3 Sept 2020, 11:20 AM

মার্চে নিউ ইয়র্কের পুলিশ ৪১ বছর বয়সী ডেনিয়েল প্রুডকে ‘স্পিট হুড’ পরিয়ে তার মুখ দুই মিনিট রাস্তার উপর ঠেসে ধরেছিল বলে বডি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে। ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পর হাসপাতালে প্রুডের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনার দুই মাস পর মিনিয়াপোলিসে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের, যা বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের জন্ম দেয়।

বুধবার পরিবারের সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রুডকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ করেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

অগাস্টে কেনোশায় পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ জেইকব ব্লেক গুরুতর আহত হওয়ার পর উত্তেজনা ফের বাড়তে শুরু করে। শরীরের পেছনের অংশে ৭টি গুলি খাওয়া ব্লেক চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন কেনোশার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি মার্চে লুইসভিলের কেন্টাকিতে মাদকবিরোধী এক অভিযানে পুলিশের গুলিতে নিজের বাড়ির ভেতর নিহত আফ্রিকান-আমেরিকান নারী ব্রিয়োনা টেইলরের ঘটনায়ও দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের দাবি তুলেছেন।

“আমার মনে হয়, বিচার বিভাগকে তার মতো করে কাজ করতে দেওয়া উচিত। অন্তত পুলিশের ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়া প্রয়োজন," ডেলাওয়ারেতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বাইডেন।

বুধবার মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বর্ণবাদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করে এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার গুলির ঘটনা ‘খুবই বিরল’।

প্রুডের ঘটনায় পুলিশ ডেকেছিলেন তার ভাই, জো। ওয়ারহাউসে কাজ করা প্রুড ৫ সন্তানের জনক; তিনি সেদিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।

বিবিসি জানিয়েছে, গত ২৩ মার্চ জো তার ভাইয়ের তীব্র মানসিক সমস্যার কথা জানিয়ে নিউ ইয়র্কের রচেস্টারের পুলিশকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে অনুরোধ করেন।

“আমি আমার ভাইয়ের সাহায্যের জন্য পুলিশ ডেকেছিলাম, তাকে মেরে ফেলতে নয়,” বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন জো।

পুলিশ উপস্থিত হওয়ার আগে প্রুডে হালকা তুষারপাতের মধ্যে খালি গায়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছিলেন।

বডি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পর প্রুডকে কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে দেখা গেছে। পুলিশের কর্মকর্তারা যখন তাকে মাটিতে শুয়ে হাত পেছনে রাখতে বলেন, তখনও তিনি ‘অবশ্যই, অবশ্যই’ বলেছেন।

এরপরই হঠাৎ করে প্রুড উত্তেজিত হয়ে ওঠেন; ঘিরে থাকা কর্মকর্তাদের অভিশাপ দেন ও থুতু নিক্ষেপ করতে থাকেন। তবে ফুটেজে তাকে কখনোই পুলিশের কাজে শারীরিকভাবে বাধা দিতে দেখা যায়নি।

প্রুড পুলিশকে জানান, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এরপরই পুলিশ সদস্যরা তাকে ‘স্পিট হুড’ পরিয়ে দেন। বিশেষ তন্তু দিয়ে বানানো জালের মতো এই ‘স্পিট হুড’ মূলত সন্দেহভাজনদের থুথু বা শ্লেষ্মা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের রক্ষা করে।

সমালোচকদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই ‘স্পিট হুড’ ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছেন। তারা বলছেন, এটি কেবল বিরক্তিকর ও অপমানজনকই নয়, যার মাথা ও মুখ এই ‘স্পিট হুড’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে তার ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হতে পারে।

এমনকী আটক ব্যক্তির শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে কি না, এই আবরণের কারণে তা বোঝাও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে, বলছেন তারা।

ভিডিওতে এরপর পুলিশের এক সদস্যকে দুই হাত দিয়ে প্রুডের মুখ রাস্তার উপর ঠেসে ধরতে এবং ‘থুথু দেওয়া বন্ধ কর’ বলতে শোনা গেছে।

এরপর প্রুড শান্ত হয়ে ও নির্জীব হয়ে যান। অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রুডের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক সপ্তাহ পর, ৩০ মার্চ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।

পারিবারিক আইনজীবী জানিয়েছেন, পুলিশের কাছ থেকে ফুটেজ উদ্ধারে ‘কয়েক মাস’ সময় লাগার কারণে ঘটনাটি আগে জনসম্মুখে আনা যায়নি।

নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল এক বিবৃতিতে চার মাসেরও বেশি সময় আগের এ ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। এ নিয়ে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত করা হয়নি।

রচেস্টারভিত্তিক দৈনিক ডেমোক্র্যাট অ্যান্ড ক্রনিকল জানিয়েছে, তাদের দেখা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রুডের মৃত্যু ‘শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা’ থেকে হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশের এ নির্যাতনের প্রতিবাদে বুধবার রচেস্টার জননিরাপত্তা ভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানিয়েছে দৈনিকটি। পুলিশ এদিন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পেপার স্প্রে ও পেপার বল ব্যবহার করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।