চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি: এফবিআই পরিচালক

চীন সরকারের গুপ্তচরগিরি ও চৌর্যবৃত্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য ‘দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় হুমকি’ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার রে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2020, 10:35 AM
Updated : 8 July 2020, 11:00 AM

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ঘণ্টাখানেকের ওই বক্তৃতায় রে বলেছেন, বেইজিং এখন বিদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকদের দিকে নজর দিয়েছে, তাদেরকে জোর করে দেশে ফেরাতে চেষ্টা করছে।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও এফবিআইয়ের এ পরিচালক অভিযোগ করেন।

“প্রয়োজনে যে কোনো উপায়ে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হতে চীন তার সমগ্র রাষ্ট্রকে কাজে লাগাচ্ছে,” বলেন তিনি।

বক্তৃতায় রে বিভিন্ন বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ, তাদের বিস্তৃত অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি, তথ্য ও অর্থ চুরি, বেআইনী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ঘুষ ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে মার্কিন নীতিতে প্রভাব বিস্তারের নানান অভিযোগ হাজির করেন।

“এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি আমরা যে এফবিআইকে এখন প্রতি ১০ ঘণ্টায় একটি করে চীন সংক্রান্ত কাউন্টার ইন্টিলিজেন্স মামলা খোলা লাগছে। এখন প্রায় ৫ হাজারের মতো কাউন্টার ইন্টিলিজেন্স মামলা সক্রিয় আছে, এর অর্ধেকই চীন সংক্রান্ত,” বলেন তিনি।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংই মূলত বিদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকদেরকে দেশে ফেরাতে বা চুপ করিয়ে দিতে নেয়া কর্মসূচি ‘ফক্স হান্টের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ এ এফবিআই পরিচালকের।

“আমরা কথা বলছি (তাদের) রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, ভিন্নমতাবলম্বী ও সমালোচকদের নিয়ে, যারা চীনের বিস্তৃত মানবাধিকার লংঘনের বিষয়গুলো উন্মোচন করতে চান। চীনের সরকার এদেরকে জোর করে দেশে ফেরাতে চায়; যে কৌশলে তারা এটি হাসিল করছে, তা স্তম্ভিত হওয়ার মতো,” বলেছেন তিনি।

“চীন যখন তাদের তালিকায় থাকা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির সন্ধান পায় না, তখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছে গুপ্তচর পাঠায়। কী বার্তা তারা দেয়? নির্দিষ্ট ওই ব্যক্তির সামনে তখন দুটো পথ খোলা থাকে, স্বেচ্ছায় চীনে ফিরে যাও, নাহলে আত্মহত্যা কর,” বলেন রে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত চীনের কোনো নাগরিককে দেশে ফেরাতে চীনা কর্মকর্তারা এমন কিছু করলে তাকে এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগেরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বেইজিং তাদের দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এমন অনেককে দেশে ফিরতে চাপ দেয়ার কথা অতীতে স্বীকার করেছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

চীনের হুমকি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামনের সপ্তাহগুলোতে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান রে।

এফবিআই পরিচালকের এ বক্তব্য এমন সময়ে এলো যখন নতুন করোনাভাইরাস, বাণিজ্য চুক্তি, হংকং ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কয়েক মাস ধরেই বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারীর জন্য চীনকে দোষারোপ করে আসছেন।

চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও টিকটকসহ বেশকিছু চীনা অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পথ খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।

“এই অ্যাপগুলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নজরদারি ব্যবস্থাপনার অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করছে,” বলেছিলেন তিনি।