নতুন করোনাভাইরাসের ‘উৎস এখনও রহস্যাবৃত’, বলছে উহানের ল্যাব

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎস এখনও রহস্যাবৃত বলে মন্তব্য করেছেন চীনের উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লিউআইভি) অধ্যাপক ইউয়ান জিমিং। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2020, 01:21 PM
Updated : 28 April 2020, 01:21 PM

চীনের এ পরীক্ষাগারেই ভাইরাসটি বানানো হয়েছিল, ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’ প্রচারকদের এমন দাবিও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থার রয়টার্স।

ডব্লিউআইভির ন্যাশনাল বায়োসেফটি ল্যাবের এ পরিচালক বলেছেন, প্রাণঘাতী এ করোনাভাইরাস বানানোর সক্ষমতা কিংবা ইচ্ছা কোনোটাই তাদের নেই। 

ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচারকদের দাবির সঙ্গে এখন পর্যন্ত পাওয়া বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের সুস্পষ্ট বিরোধ আছে বলেও মন্তব্য তার।

মাত্র চার মাসে বিশ্বব্যাপী দুই লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া সার্স-সিওভি-২ নামের ভাইরাসটি চীনের উহানেই প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল। এ কারণে হুবেই প্রদেশের এ রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ল্যাবেই ভাইরাসটির উৎপত্তি বলে অনেকে দাবি করা শুরু করেন।

রয়টার্স বলছে, ইতিমধ্যে প্রকাশিত অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভাইরাসটি ‘মনুষ্যনির্মিত নয়, প্রাকৃতিক’ এমন অভিমত প্রকাশ করা হলেও চীনই ভাইরাসটি বানিয়ে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে বলে বিশ্বাস করা মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম নয়।

এপ্রিলের মাঝামাঝি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও ভাইরাসটির উৎপত্তি উহানের ল্যাবেই কিনা, যুক্তরাষ্ট্র তা খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছিলেন।

“নতুন একটি করোনাভাইরাসের নকশা করা ও সেটি বানানোর ইচ্ছা বা সক্ষমতা কোনোটিই ডব্লিউআইভির নেই। সার্স-সিওভি-২’র জেনোম থেকে এটি যে মনুষ্যনির্মিত তেমন তথ্যও পাওয়া যায়নি,” রয়টার্সের করা প্রশ্নের লিখিত জবাবে বলেছেন ইউয়ান।

ভারতের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এক গবেষণা প্রতিবেদনে নতুন করোনাভাইরাসের প্রোটিনের সঙ্গে এইচআইভির ‘অদ্ভূত মিল’ রয়েছে দাবি করা হয়েছিল।

ইনস্টিটিউটটি পরে তাদের ওই প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নিলেও বহুল পঠিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনই কোভিড-১৯ এর বিস্তার ও নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি সংক্রান্ত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পালে হাওয়া দেয়, বলছে রয়টার্স। 

তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই এখন বলছেন, সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসটি কোনো বন্যপ্রাণী থেকেই এসেছে। তাদের সন্দেহের তালিকায় বাদুড় এবং বনরুইর অবস্থানও উপরের দিকেই।

মানবদেহে সংক্রমিত হয় এমন করোনাভাইরাসের মধ্যে যে ৭টি বিজ্ঞানীদের কাছে সুপরিচিত, সেগুলোর উৎসও মূলত বাদুড়, ইঁদুর ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণী।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের কারণেই নতুন নতুন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে মন্তব্য করে ইউয়ান বলেন, “উদীয়মান সংক্রামক রোগগুলোর ৭০ শতাংশেরই বেশি আসে প্রাণী বিশেষ করে বন্যপ্রাণীদের কাছ থেকে।”

উহানের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষাগারে গবেষণার জন্য রাখা বাদুড় থেকে দুর্ঘটনাবশত নতুন করোনাভাইরাসটি ছড়িয়েছে, এমন ভাষ্যও প্রত্যাখ্যান করেন সেখানকার এ শীর্ষ কর্মকর্তা। বলেন, তাদের পরীক্ষাগারে জৈব নিরাপত্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়।

রয়টার্স বলছে, আগেও বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আলোড়ন তুলেছিল।

২০০২-০৩ এর দিকে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করা সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির উৎপত্তি কোনো পরীক্ষাগারে হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। কয়েক দশক আগে এইচআইভি/এইডসের আবির্ভাবের সময়ও নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ডালপালা মেলেছিল। 

মার্চে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান টুইটারে নতুন করোনাভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই চীনে আসতে পারে বলে টুইটারে দাবি করেছিলেন।

অক্টোবরে উহানে হওয়া সপ্তম ওয়ার্ল্ড মিলিটারি গেইমসের সময় ভাইরাসটি চীনে এসেছে বলে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান আলোচনাও আছে।

ঝাও’র দাবি কিংবা চীনা সোশাল মিডিয়ার জল্পনা নিয়ে ইউয়ান সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। বলেছেন, ভাইরাসের উৎপত্তি কোথায়, এখনও তার উত্তর মেলেনি।  

ডব্লিউআইভির এ ল্যাব প্রধান চলতি মাসে প্রকাশিত ব্রিটিশ-জার্মান বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসটির যে পরিবর্তিত রূপ দেখা গেছে তা চীনের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন এবং তুলনামূলক ‘আদিম’ বলে ওই প্রতিবেদনে গবেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রেই ভাইরাসটি প্রথম আবির্ভূত হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন তারা।

“ভাইরাসের উৎস বের করা খুবই চ্যালেঞ্জিং, এর অনিশ্চয়তাও ব্যাপক,” বলেছেন ইউয়ান।