‘লকডাউন’ কোন দেশ কীভাবে তুলছে

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীতে পড়ে বাঁচার একমাত্র উপায় হিসেবে শুরু হয়েছিল লকডাউন, তাতে জীবন রক্ষা পেলেও মানুষের জীবিকা গেছে আটকে; তাই পরিস্থিতি বুঝে ধীরে ধীরে অবরুদ্ধ অবস্থা শিথিল করছে নানা দেশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2020, 01:29 PM
Updated : 15 April 2020, 12:17 PM

সর্বপ্রথম সংক্রমণ ঘটার পর প্রথম লকডাউন হয়েছিল চীনের উহান শহর, সেখানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে।

এই মহামারীতে বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেন মাস গড়ানোর পর লকডাউন শিথিল করেছে, সেই পথে হাঁটছে অস্ট্রিয়াও। ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডও তা অনুসরণ করছে।

চীনের উহানসহ হুবেই প্রদেশে লকডাউন জারি ছিল দুই মাসের বেশি সময়। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় গত ২৮ মার্চ সেখানে অবরুদ্ধ অবস্থার বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

ফলে এখন আবার আগের মতো মেট্রোতে চড়তে পারছেন উহানবাসী, অন্য প্রদেশে যেতেও পারছেন।

লকডাউন শেষে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরেছে চীনের উহান। ছবি: রয়টার্স

চীনের পর করোনাভাইরাসের বড় ঝড় সামলাচ্ছে ইউরোপের দুই দেশ স্পেন ও ইতালি। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় অল্প দিনেই তারা চীনকে ছাড়িয়ে যায়। ইতালিতে দেড় লক্ষাধিকের আক্রান্তের মধ্যে ২০ হাজার মারা গেছে, স্পেনে পৌনে দুই লাখ আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ১৮ হাজারের বেশি।

মৃত্যুর হার কমে আসার পর এক মাসের বেশি সময় পর সোমবার লকডাউন শিথিল করে স্পেন। অবকাঠামো শিল্প ও কারখানাগুলো সচল করায় কাজে ফিরছেন এই দুই খাতের মানুষ।

তবে ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান লকডাউনের সময়ও খোলা ছিল। দোকানপাট, বার ও রেস্তোরাঁসহ জরুরি নয়, এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ থাকছে স্পেনে।

ইতালিতে পাঁচ সপ্তাহ পর মঙ্গলবার লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এই শিথিলতায় সবার আগে খুলছে বইয়ের দোকান,মনোহারী দোকান ও শিশুদের জামা-কাপড়ের দোকান। এছাড়া কম্পিউটার সরঞ্জাম ও কাগজের দোকানও খুলছে।

তবে লকডাউনের এই শিথিলতা পুরো ইতালির জন্য নয়। যেসব শহরে পরিস্থিতির উন্নতি আশাব্যঞ্জক নয়, সেখানে লকডাউন থাকবে।  

আবার দেশটির উত্তরাঞ্চলের লোমবার্দি, যাকে মহামারীর কেন্দ্র বলা হচ্ছে, সেখানে খোলা হবে শুধু শিশুদের জামা-কাপড়ের দোকান।

লোমবার্দির মতো ইতালির উত্তরাঞ্চলের আরও শহরেও বিধি-নিষেধ সামান্য শিথিল হয়েছে। ভেনেতোর মতো শহরে ওই তিন ধরনের দোকান খোলা থাকবে শুধু সপ্তাহে দুই দিন।

ইতালির শহরগুলোতে কাউকে বের হতে হলে মাস্ক পরতে হবে, আর দোকানগুলোকে জীবাণুমুক্ত এবং ক্রেতাদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

ইতালিতে এই পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক আক্রান্তের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মারা গেছে। তবে সোমবার নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কম।

ইতালি ও স্পেন কোভিড-১৯ রোগে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

লকডাউনের মধ্যে এক স্বজনকে চিরবিদায় জানাচ্ছেন এই ইতালীয়রা। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রিয়ায় লকডাউন শিথিলের সুযোগে মঙ্গলবার হাজার হাজার দোকান খুলেছে।

ছোট ছোট সুপারশপ, হার্ডওয়্যারের দোকান, ও ফুলের দোকান খুললেও এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে মানতে বলা হয়েছে। এসব দোকানে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

অস্ট্রিয়ায় ১৪ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ৩৮৪ জন মারা গেছে। ইতালিকে অনুসরণ করে এক মাসের বেশি সময় আগে দেশটি লকডাউন জারি করেছিল।

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্জ বলেছেন, ধীরে ধীরে বিধিনিষেধগুলো তুলে নেওয়া হবে।

বড় দোকানগুলো, শপিং  সেন্টার ও রূপচর্চার দোকানগুলো ১ মে থেকে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অস্ট্রিয়া সরকারের। আর মে মাসের মাঝামাঝিতে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।

ইউরোপে ডেনমার্ক শিশুদের স্কুলগুলো খুলে দিতে যাচ্ছে। পোল্যান্ড দোকান খোলার মধ্য দিয়ে আগামী সপ্তাহে লকডাউন তুলে দিতে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় কমিশন ইতোমধ্যে সদস্যগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দেশগুলো যেন বিধিনিষেধ তোলার ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে নেয় ।

বিপর্যস্ত ইউরোপে পরিস্থিতির উন্নতি দেখে বিভিন্ন দেশ লকডাউন শিথিলের দিকে এগোলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সপ্তাহেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে সামান্য অবনমন দেখে কোনো দেশ যদি আগেভাগে বিধিনিষেধ তুলে নেয়, তাহলে ভাইরাসটির আরও ভয়ংকর প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে।

লকডাউন শিথিল করেছে স্পেনও। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপে বিপর্যস্ত আরেক দেশ ফ্রান্স লকডাউন এখনই না তুলে এর মেয়াদ আরও চার সপ্তাহ বাড়িয়ে ১১ মে পর্যন্ত করেছে।

ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর কোনো টিকা ও ওষুধ না থাকায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

সেজন্যই রোগ ছড়ানো ঠেকাতে অবরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করে বিভিন্ন দেশের সরকার, যাতে ঘরের মধ্যে আটকে পড়েছে গোটা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ। ফলে স্থবিরতা নেমেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে, যা ভয়াবহ মন্দার পদধ্বনি শোনাচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

তবে ২০ এপ্রিলের পর লকডাউনে শিথিলতা আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে যেসব এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে, সেখানে ধীরে ধীরে কিছু বিধিনিষেধ তোলা হবে।

ভারতে রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৩।

বাংলাদেশে লকডাউনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে, যা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে।

এই সময় সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে; বাইরে বের হওয়ার সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থাকে অন্য দেশগুলোর ঘোষিত লকডাউনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।