করোনাভাইরাসের উৎসস্থল উহানে লকডাউন তুলে নেওয়া শুরু

দুই মাসেরও বেশি সময় বিচ্ছিন্ন থাকার পর চীনের উহান শহর থেকে লকডাউন তুলে নেওয়া শুরু হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2020, 12:07 PM
Updated : 28 March 2020, 12:07 PM

বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের উৎসস্থল উহানে শনিবার কিছু মেট্রো সার্ভিস ফের চালু ও সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের ফের একত্রিত হওয়ারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে শহরটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে।

গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে শহরটি দেশের অপরাপর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিনে এই শহরটিতেই প্রথম নতুন একটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় যা পরে নভেল করোনাভাইরাস নাম পায়। ভাইরাসটি শহরটি একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছে বলে ধারণা।

এর পর থেকে চীনের অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে এখন বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, যা থেকে সৃষ্ট রোগকে কোভিড-১৯ বলা হচ্ছে। যার লক্ষণ কাঁশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট।

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে ৫০ হাজারেরও বেশি লোক করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুরো হুবেই প্রদেশজুড়ে অন্তত তিন হাজার রোগীর মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি এখানে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। শুক্রবার প্রদেশটিতে নতুন করে ৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনিবার দেওয়া প্রতিবেদনে প্রদেশটি জানিয়েছে; আক্রান্তদের সবাই বিদেশ ফেরত। এর অর্থ এদিন স্থানীয়ভাবে কেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হননি।

লকাডাউন আংশিক তুলে নেওয়ার পর উহান রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী লোকজন শহরটিতে প্রবেশ করতে পারবে, কিন্তু বের হতে পারবে না বলে বিবিসি জানিয়েছে।

শনিবার সকালে প্রথম যে হাই-স্পিড ট্রেনটি শহরে প্রবেশ করে সেটির এক যাত্রী ছিলেন ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী গুয়ো লিয়াংকাই। এক মাসের জন্য সাংহাইয়ে গিয়ে সেখানে তিন মাস আটকা পড়েছিলেন তিনি।

স্টেশনে নেমে নিজের মা-র সঙ্গে দেখা হওয়ার পর গুয়ো রয়টার্সকে বলেন, “পরিবারের সবাইকে আবার দেখতে পাবো এতে আমি খুব খুশি। মাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিশেষ সময় হওয়ার কারণে এ রকম কিছুই করলাম না।”

চীনের মধ্যাঞ্চলীয় এই শিল্প প্রধান শহরটি থেকে লোকজনের বের হওয়া ও প্রবেশের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল কর্তৃপক্ষ। এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহরটির লোকজনকে তাদের বাড়িতেই  সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। বাস ও ট্যাক্সিসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়, শুধু জরুরি পণ্যের দোকানগুলো খোলা রাখা হয়।

“আমি মনে করি কাজ ফের শুরু করার মধ্য দিয়ে এক ধরনের আশার সঞ্চার হচ্ছে। চীন যে জয়ী হয়েছে এতে এটি অন্তত দেখানো গেছে,” বলেন উহানে কাজে ফেরা ৩৫ বছর বয়সী ঝ্যাং উলুন।

তবে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস ও বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও এখনও সতর্কর্তা বজায় রেখেছে উহানের কর্তৃপক্ষ।

সুরক্ষা পোশাকে পুরো শরীর ঢাকা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা স্টেশনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে লোকজনের হাত জীবাণুমুক্ত করে দিচ্ছে। শহরে আসা অথবা ফেরা লোকজনকে কী কী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে হাতে ধরা বিভিন্ন ব্যানারের মাধ্যমে তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এগুলো মধ্যে মাস্ক পরার কথা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইলে দেওয়া স্বাস্থ্য কোড স্ক্যান করার কথা উল্লেখ আছে।

ঝুঁকির কথা জিজ্ঞেস করা হলে মেট্রোর লাইনে দাঁড়ানো যাত্রী ৩০ বছর বয়সী উয়ান হাই বলেন, “সবাই সঠিক পূর্বসতর্কতা অনুসরণ করছে তাই সমস্যা হওয়ার কথা না, কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।”