করোনাভাইরাস: ভারতের বানানো পরীক্ষা কিটের পেছনে যে নারী

করোনাভাইরাস সন্দেহভাজনদের অপ্রতুল পরীক্ষার জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা ভারতে এক নারী স্বল্পমূল্যে দ্রুত ফল দিতে সক্ষম পরীক্ষা কিট বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2020, 08:53 AM
Updated : 29 March 2020, 08:53 AM

মিনাল দাখাভে বোসলে নামের ওই ভাইরাস বিশেষজ্ঞ নিজের সন্তান জন্মদানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ওই ‘টেস্টিং কিট’ বানান বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ভারতের বানানো ওই করোনাভাইরাস পরীক্ষা কিট বৃহস্পতিবারই প্রথম বাজারে এসেছে; যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে ফ্লুর লক্ষণ থাকা মানুষজনের দ্রুত পরীক্ষা করে কারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত, কারা নয় তা শনাক্তে আশা যোগাচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনের মাইল্যাব ডিসকভারিকেই প্রথম এ ‘টেস্টিং কিটগুলো’ বানানো ও বাজারজাতকরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রথম ব্যাচে তারা পুনে, মুম্বাই, দিল্লি, গোয়া ও বেঙ্গালুরুতে দেড়শটির মতো কিট পাঠিয়েছে।

“আমাদের উৎপাদক অংশটি পুরোদমে কাজ করছে, সোমবারের মধ্যে আমরা পরবর্তী ব্যাচও পাঠাতে পারবো,” শুক্রবার বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন মাইল্যাবের চিকিৎসা বিষয়ক পরিচালক ড. গৌতম ওয়াংখেডে।

এ অনুজীব পরীক্ষাগার কোম্পানি এর আগে এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস বি, সি ও অন্যান্য রোগের টেস্টিং কিটও বানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা এখন প্রতি সপ্তাহে এক লাখ করে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কিট বানাতে পারবে, প্রয়োজন পড়লে এই সংখ্যা সপ্তাহে দুই লাখও করা সম্ভব।

মাইল্যাবের প্রতিটি কিট ১০০টি নমুনা পরীক্ষা করবে; আর এর দাম পড়বে মাত্র এক হাজার দুইশ রুপি। ভারত এর আগে অন্যান্য দেশ থেকে যেসব কিট আমদানি করেছিল, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে খরচ পড়েছিল এর প্রায় চার গুণ, ৪ হাজার ৫০০ রুপি।

“আমাদের কিটগুলো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই ফল জানাবে, যেখানে আমদানি করা কিটে ৬-৭ ঘণ্টা লাগে,” বলেছেন মাইল্যাবের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রধান ভাইরোলজিস্ট মিনাল দাখাভে।

মিনালের নেতৃত্বাধীন দলই ভারতের এই করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট উদ্ভাবন করেছে, যেটাকে তারা ‘প্যাথো ডিটেক্ট’ নামে ডাকছেন।

“এটা তৈরি হয়েছে রেকর্ড সময়ে, মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে। যেখানে এ ধরনের কিট বানাতে অন্তত তিন থেকে চার মাস সময় লাগে,” বলেছেন মিনাল।

করোনাভাইরাসের পরীক্ষা কিট বানানোর সময় এ ভাইরোলজিস্টকে নিজের ‘ডেডলাইনের’ সঙ্গেও লড়তে হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তিনি যখন কিট বানাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তার মাত্র কয়েকদিন আগেই গর্ভকালীন জটিলতার চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন তিনি। এ নারী গত সপ্তাহেই একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

“জরুরি ছিল, সে কারণেই আমি চ্যালেঞ্জটি নিয়েছিলাম। আমাকে দেশের ডাকে সাড়া দিতে হয়েছে,” বলেছেন তিনি। কিট বানাতে তাদের ১০ সদস্যের দল ‘কঠোর পরিশ্রম’ করেছে বলেও জানান এ বিজ্ঞানী।

সব শেষে মিনাল গত ১৮ মার্চ ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (এনআইভি) তার কিটের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য জমা দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় কিটটির বাজারজাতের অনুমতি চেয়ে ভারতের এফডিএ ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (সিডিএসসিও) কাছে প্রস্তাব জমা দেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাকে ছুটতে হয় সিজারিয়ান করতে।

“আমাদের সময়ের স্বল্পতা ছিল, আমাদের খ্যাতিও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। আমরা প্রথম চেষ্টাতেই সব ঠিকঠাত পেতে চেয়েছি, মিনাল ওই চেষ্টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন,” বলেছেন ড. ওয়াংখেডে।

এনআইভিতে জমা দেয়ার আগে মিনালের দল কিটটি সঠিক ফল দেয় কিনা সে সংক্রান্ত পরীক্ষা ও পুনঃপরীক্ষা করেছে। এনআইভির আওতাধীন সরকার পরিচালিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চও (আইসিএমআর) মাইল্যাবের কিট ১০০ শতাংশ সঠিক ফল দেয় বলে নিশ্চিত করেছে।

“একই নমুনা নিয়ে যদি আপনি ১০টি পরীক্ষা করেন, তাহলে ১০টিরই একই ফল দেবে এই কিট। আমরা এটি অর্জন করতে পেরেছি; আমাদের কিট নিখুঁত,” বলেছেন মিনাল।

বৃহস্পতিবার ভারত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও বেশ কয়েকটি দেশের নিবন্ধন আছে এমন ১৫টি বেসরকারি কোম্পানিকেও করোনাভাইরাসের পরীক্ষা কিট বাজারজাত করার অনুমতি দিয়েছে।

এর ফলে সরবরাহ বাড়বে এবং ল্যাবগুলোতে পরীক্ষার পরিমাণও বাড়বে, বলছেন ড. ওয়াংখেডে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেস্টিং কিটের সংখ্যাবৃদ্ধি আপাতত স্বস্তি এনে দিলেও ভারতকে করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি মোকাবেলায় তার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে।

“দক্ষিণ কোরিয়া, এত ছোট একটি দেশ, কিন্তু তাদেরও করোনাভাইরাস পরীক্ষায় সাড়ে ছয়শ ল্যাব আছে, আমাদের কয়টি আছে,” প্রশ্ন ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব সুজাতা রাওয়ের।