বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ অবরুদ্ধ দশায় চলে যাওয়ায় বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

>>রয়টার্স
Published : 26 March 2020, 11:12 AM
Updated : 26 March 2020, 11:13 AM

দুইশর মতো দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজারের।

ভাইরাস কবলিত প্রায় প্রতিটি দেশে আতঙ্কিত লোকজন টয়লেট পেপার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নানা উপকরণের মতো গৃহস্থালি পণ্যে কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এতে সুপারমার্কেটগুলোর পণ্যের তাক ফাঁকা পড়ে থাকার একই চিত্র দেখা গেছে দেশে দেশে।

এই ধরনের কেনাকেটায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, মহামারীতে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়ে পড়লে নিজেদের জনগণ যাতে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য কোনো কোনো দেশ খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে এখনই লাগাম দিতে পারে।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ (কৃষিবাণিজ্য) ফিন জিয়েবেল বলেছেন, “মানুষ আতঙ্কিত হওয়া শুরু করেছে। প্রধান রপ্তানিকারকরা যদি দেশেই খাদ্যশস্য রাখতে শুরু করে তাহলে ক্রেতাদের জন্য তা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এটা আতঙ্কের কারণে হবে এবং মোটেই যৌক্তিক হবে না। কারণ বিশ্বে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য রয়েছে।”

বিশ্বের তৃতীয় চাল রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম এবং নবম গম রপ্তানিকারক কাজাখস্তান অভ্যন্তরীণ যোগানের কথা চিন্তা করে এরইমধ্যে এসব খাদ্যশস্য রপ্তানি সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক ভারত মাত্রই তিন সপ্তাহের লকডাউনে গেছে, যাতে অনেক সরবরাহ চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে রাশিয়ার ভেজিটেবল অয়েল ইউনিয়ন সূর্যমুখীর বীজ রপ্তানি সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়ায় এই তেলের উৎপাদন কমে গেছে।

অপরপক্ষে আমদানিকারকদের দিক থেকে ইরাক ঘোষণা দিয়েছে তাদের ১০ লাখ টন গম ও আড়াই লাখ টন চাল দরকার। দেশটির ‘ক্রাইসিস কমিটি’ খাদ্য মজুদের পরামর্শ দেওয়ার পর তারা এই আমদানির ঘোষণা দিয়েছে।

রপ্তানি ও আমদানিকারক উভয়পক্ষ থেকে একইসঙ্গে এ ধরনের তৎপরতায় কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে খাদ্যপণ্যের সরবরাহে অহেতুক বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চাল ও গমের উৎপাদন রেকর্ড ১.২৬ বিলিয়ন টন হতে চলেছে। এই পরিমাণ উৎপাদন হলে তা বিশ্বের চাহিদা মিটিয়ে আরও উদ্বৃত্ত থাকবে।

তবে রপ্তানিতে আরও বিধি-নিষেধ আসার শঙ্কায় এরইমধ্যে বিশ্ব বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ একজন চাল ব্যবসায়ী বলেছেন, “এটা সরবরাহের বিষয়।

ভিয়েতনাম রপ্তানি বন্ধ করেছে, ভারত লকডাউনে এবং থাইল্যান্ডও একই পদক্ষেপ ঘোষণা করতে পারে।”

থাইল্যান্ডে চালের দাম এইরমধ্যে বেড়ে টন প্রতি ৪৯২ দশমিক ৫ ডলারে উঠেছে, যা ২০১৩ সালের অগাস্টের পর সর্বোচ্চ। 

২০০৮ সালের খাদ্য সংকটের সময় টন প্রতি চালের দাম উঠেছিল এক হাজার ডলারে। বিভিন্ন দেশ রপ্তানি বন্ধ করায় এবং অপরপক্ষে আতঙ্কিত হয়ে চাল কেনায় লাগামহীন হয়ে পড়েছিল এই খাদ্যপণ্যের বাজার।

এবার ২০০৮ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলেই মনে করছেন সিঙ্গাপুরের ওই চাল ব্যবসায়ী।

“একটা বিষয় হচ্ছে বিশ্বে প্রচুর চালের মজুদ আছে, বিশেষ করে ভারতে অনেক উদ্বৃত্ত।”

এই বছরই প্রথম বিশ্বে চালের মজুদ ১৮০ মিলিয়ন টন ছাড়িয়েছে, যা ২০১৫-১৬ সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।