ভারত সফরের পথে ট্রাম্প

ভারত সফরে রওনা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের জন্য সস্ত্রীক দেশটিতে প্রথম সফরে যাচ্ছেন তিনি।

>>রয়টার্স
Published : 23 Feb 2020, 06:10 PM
Updated : 23 Feb 2020, 06:29 PM

১৭ ঘণ্টার যাত্রাপথে প্রথমে জার্মানির রামস্টেইন সামরিক ঘাঁটিতে বিরতির পর তারা ভারতে যাবেন।

ভারতে মোট তিনটি শহরে যাবেন ট্রাম্প৷ আহমেদাবাদ, আগ্রা এবং নয়াদিল্লি৷ সোমবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে গুজরাটের আহমেদাবাদ বিমান বন্দরে নামবেন ট্রাম্প৷ সেখান থেকে শুরু হবে ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রোড শো৷

বিমানবন্দর থেকে সজ্জিত মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে চলবে রোড শো৷ যাত্রাপথে ২৮টা মঞ্চে বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতির ঝলক থাকবে৷ যাত্রাপথেই তিনি মহাত্মা গান্ধীর সবরমতী আশ্রমে যাবেন৷ সেখানে তাকে চরকা উপহার দেওয়া হবে৷ মোতেরা স্টেডিয়ামে তিনি পৌঁছবেন ১ টা ১৫ মিনিটে। সেখানে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান হবে। মধ্যাহ্নভোজের পর যাবেন আগ্রায়।

বিকেলে আগ্রায় পৌঁছে সূর্যাস্তের আলোয় অপরূপ তাজমহল দেখার পর দিল্লির জন্য রওনা হবেন ট্রাম্প৷ পরদিন সকাল ১০ টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে স্বাগত জানানো হবে তাকে৷ সেখান থেকে রাজঘাটে গান্ধীর প্রতি সম্মান দেখাবেন তারা৷ সাড়ে এগারোটায় শুরু হবে মোদী ও ট্রাম্পের বৈঠক৷ বেলা তিনটায় মার্কিন দূতাবাসে যাবেন তিনি৷ সেখানে ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিনিধদলের সঙ্গে কথা হবে৷ এর ফাঁকেই মেলানিয়া ট্রাম্প দিল্লির সরকারি স্কুল দেখে আসবেন৷ রাত দশটায় আবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করবেন ট্রাম্প৷

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সংশয়:

চীন,কানাডা এবং মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার পর ট্রাম্প এবার মার্কিন পণ্যের জন্য আরো বাজার খুলে দিতে ভারতের সঙ্গেও একইরকম বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইবেন। তবে এক্ষেত্রে চমকপ্রদ কোনো অগ্রগতি হওয়ার আশা ক্ষীণ।ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন,এ ধরনের চুক্তি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরে।

তাছাড়া,ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একে অপরের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের মধ্য দিয়েও টানাপোড়েনের সম্পর্ক চলেছে।গত মাস ধরে দু’পক্ষ একটি ছোটখাট বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য নিবিড় আলোচনা চালিয়ে আসলেও দুই দেশেরই কর্মকর্তারা বলেছেন সেটি হওয়া অনেক দূরের পথ।

ওদিকে, বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি পূরণের জন্য আমেরিকার কৃষি ও ডেইরি পণ্যর রপ্তানি চান ট্রাম্প। কিন্তু ভারত তাতে রাজি নয়। বরং কিছুটা হলেও, সামরিক অস্ত্র কিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চায় ভারত। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষেই বাদানুবাদ আছে।

এ পরিস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে কোনও বড় ধরনের সমঝোতার আশা তেমন নেই। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হতে প্রবাসী ভারতীয়দের উপর নজর থাকবে ট্রাম্পের। তাই ভারত-বন্ধু হিসাবে একটা ইমেজ গড়ে তুলতে তিনি সচেষ্ট থাকতে পারেন।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ভারতের অর্থনীতি এখন খুব ভাল যাচ্ছে না। এ সময় ভারত  আরো বেশি চায় যুক্তরাষ্ট্রের খোলা বাজার, আরও বেশি রপ্তানি সুবিধা। ভারতীয় পেশাদারদের জন্য উদার ভিসা-নীতি। উন্নত প্রযুক্তি, পুঁজি। কিন্তু ট্রাম্প যদি চাপ সৃষ্টির পথ বেছে নেন, তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।  এ টানাপড়েনেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি রয়ে যেতে পারে অধরা।

সমঝোতার যেসব ক্ষেত্র খোলা:

সম্পর্কে চড়াই-উতরাই থাকলেও, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক প্রত্যাশিত পথেই প্রসারিত হচ্ছে। সেদিক থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর গুরুত্ববাহী এবং কৌশলী ও অংশদারীত্বর পথে হেঁটে দুপক্ষে আলোচনা এবং সমঝোতারও বেশ কিছু ক্ষেত্র খোলা থাকছে।

‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানের পর কয়েকটি সমঝোতাপত্র (‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ বা ‘মউ’) স্বাক্ষর হবে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার কিনবে ভারত। পরমাণু চুল্লি সরবরাহের মধ্য দিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দ্বার খুলতে পারে।

বাড়তে পারে মহাকাশ গবেষণার যৌথ পরিসর, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান। স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়, বিশেষ করে, ভারতের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং জেনেরিক মেডিসিন মার্কিন বাজারে পৌঁছে দেওয়া, মনোরোগ সংক্রান্ত গবেষণাও মোদী ও ট্রাম্পের আলোচনার বিষয় হতে পারে।

আবার ট্রাম্পের ‘বন্ধু’ হতে পারেন মোদী:

ট্রাম্পকে তার ‘আমেরিকা সর্বাগ্রে’ নীতির বড়াই চালিয়ে যেতে দেওয়ার জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুল্ক কমাতে পারে ভারত। তাছাড়া, মোদী এবং ট্রাম্প, দু’জনই প্রথার বাইরে গিয়ে চমক দিতে সিদ্ধহস্ত, তাই এ সফরে অপ্রত্যাশিত কোনও ঘোষণাও আসতে পারে।