করোনাভাইরাস আতঙ্কে বেইজিং, সাংহাই এখন ভুতুড়ে নগরী

নিউমোনিয়া সদৃশ নতুন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চীনের রাজধানী বেইজিং ও সাংহাইয়ের মতো ব্যস্ত শহরগুলোকেও ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2020, 10:01 AM
Updated : 9 Feb 2020, 10:14 AM

জোর ধাক্কা লেগেছে ব্যবসা বাণিজ্যে, কমে এসেছে পর্যটকের সংখ্যা।

এমনকী বছরের এই সময়ে, বিরল তুষারপাতের মধ্যেও বেইজিংয়ের রাস্তাগুলোতে হাতেগোণা অল্প কিছু লোকের দেখা মিলছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সাধারণত, তুষারপাতের সময়ে ২ কোটি ১৫ লাখ মানুষের এ রাজধানীর রাস্তা ও পার্কগুলোতে লাখ লাখ লোক খেলতে ও ছবি তুলতে নেমে আসে।

করোনাভাইরাসের শঙ্কায় সেসব স্থান এখন খা খা করছে। রাস্তাগুলো খালি, পার্কগুলো এতটাই নীরব যে কেবল পাখির কিচিরমিচিরই শোনা যাচ্ছে।

কেবল বেইজিং-ই নয়, চীনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাইসহ অন্যান্য শহরেরও পরিস্থিতি এখন অনেকটাই এরকম। করোনাভাইরাসের কারণে ছুটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া এবং বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশের শহরগুলো পরিণত হয়েছে এক একটা ভুতুড়ে নগরীতে।

হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছয় সপ্তাহ আগে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি এরই মধ্যে ৮০০র বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৩৭ হাজার। মৃত ও আক্রান্তদের সংখ্যাগরিষ্ঠই উহান ও এর আশপাশের এলাকার, বেইজিং থেকে যা প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরে।

“আমরা জানি, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। কাজ নেই, উপদ্রুত এলাকা এখান থেকে অনেক দূরে হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তুষার উপভোগের সাহস করেছি,” বলেছেন বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ নগরীর কাছে রাজকীয় অভয়ারণ্য জিংশান পার্ক ঘুরতে আসা কিয়াও।

অবশ্য প্রস্তুতি ছাড়া আসেননি; সবার মুখে মাস্ক এবং হাতে স্যানিটাইজারের বিষয়টি নিশ্চিত করেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়েছেন তিনি।

কিয়াওয়ের মতো সাহসী কয়েকজন ছাড়া চীনের রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোও এখন কেউই মাড়াচ্ছেন না।

জিংশান পার্কের এক নিরাপত্তা কর্মী জানিয়েছেন, এমনকী আকর্ষণীয় এ তুষারপাতের সময়ও তাদের অভয়ারণ্যে পর্যটক আসছেন স্বাভাবিক সময়ের তিনভাগের একভাগ।

নিষিদ্ধ নগরীর বাইরে বরফ আচ্ছাদিত বেইজিংয়ে ছবি তোলার ভালো ভালো স্পটগুলোতে এবার জনসমাগম নেই বললেও চলে। অন্যান্য বছর এই সময়ে এলাকাটিতে থাকে ট্যুর বাসের ছড়াছড়ি। এখন পর্যটকদের আলাদা আলাদা ভাষার সেই কলতান একদমই নেই।

“গত বছর যখন বরফ পড়েছিল, তখন একটা ছবি তোলার জন্য কাজ থেকে ছুটি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য এখানে এসেছিলাম, ব্যাপক ভিড় ছিল। আর এ বছর, ছবি তোলার জায়গা নিয়ে আমার একদমই দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। ভাইরাস লোকজনকে ঘরের ভেতর আটকে রেখেছে,” বলেছেন ইয়াং নামের এক ব্যক্তি।

বেইজিংয়ের উপকণ্ঠে পথচারীদের কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত ওয়াংফুজিয়ান স্ট্রিটের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ছুটির দিনগুলোতে এখানে এমন ভিড় থাকে, যে নড়াচড়াই কষ্টকর হয়ে যায়।

“এখন দেখুন। পর্যটকদের চেয়ে এখন নিরাপত্তা রক্ষী আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যাই বেশি,” বলেছেন এক রক্ষী।

সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের সরকার বড় বড় জমায়েত এমনকী দলবদ্ধভাবে খাওয়ায়ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দোকান, বার ও রেস্তোরাঁসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে পড়েছে।

“স্বাভাবিক সময়ে আপনাকে টেবিল পেতে অপেক্ষা করা লাগতো,” বলেছেন এক রেস্তোরাঁকর্মী। দুপুরের খাবারের সময়েও তার রেস্তোরাঁর ৫০টি টেবিলের মধ্যে মাত্র ৫টিতে লোকজন দেখা গেছে।

করোনাভাইরাসের কারণে বেইজিংয়ে ‘ফুড স্ট্রিট’ খ্যাত গুইজিতে এখন মাত্র শতাধিক দোকান খোলা আছে। অন্যরা ‘আর কতদিন এভাবে বন্ধ রাখা যাবে’, ভাবছে তা নিয়ে।