হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস শুক্রবার পর্যন্ত ২৫৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে চীনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস বৃহস্পতিবারই সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) আক্রান্তের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছিল।
২০০২-০৩ সালে দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০-র কাছাকাছি।
শুক্রবার একদিনের ব্যবধানেই চীন নতুন করে আরও দুই হাজার ১০২ জনের নিউমোনিয়া সদৃশ করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সব মিলিয়ে চীনেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১১ হাজার ৭৯১ জনে, শনিবার জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
চীনের যে প্রদেশ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সেই হুবেইয়ের বেশিরভাগ এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ সড়ক আটকে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।
ভাইরাসটি আরও ছড়াতে পারে শঙ্কায় সাম্প্রতিককালে চীন ভ্রমণ করা বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। দেশটির তিনটি প্রধান এয়ারলাইন্সও চীনের মূল ভূখণ্ডে তাদের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।
সংক্রমণ থামাতে চীনের বিভিন্ন শহরেও নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। উত্তর চীনের দেড় কোটি বাসিন্দার তিয়ানজিন শহরের সব স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভাইরাস ঠেকাতে হুবেই ও উহানের বাসিন্দাদের অবরুদ্ধ করে রাখার সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চায়না হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার।
“লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করা ও ২০০র বেশি প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চীন সরকারের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই মানবাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না,” বলেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ মানবাধিকার সংগঠন সমালোচনা করলেও চীনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বৃহস্পতিবার নতুন করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক সতর্কতাও জারি করেছে তারা।
করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রুয়ারির শেষে কুনমিংয়ে হতে যাওয়া জীববৈচিত্র সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে একটি বৈঠক ইতালির রোমে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার মারা যাওয়াদের মধ্যে ৪৫ জনই হুবেই প্রদেশের বলে চীনের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে। অন্য মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণপশ্চিমের শহর চংকিং-এ।
এখন পর্যন্ত নিহত ২৫৯ জনের ১৯২ জনই উহানের।
চীনের বাইরে কয়েক ডজন দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিললেও এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
সংক্রমণ ঠেকাতে অনেক দেশই চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সীমিত করেছে; বিমানবন্দরগুলোতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
আক্রান্ত অঞ্চল থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফেরাতে ব্যবস্থা নিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশও।
গুগল, স্টারবাক, ইকিয়া, টেসলার মত আন্তর্জাতিক কোম্পানি চীনে তাদের সব দোকান বা কার্যক্রম বন্ধ রাখছে। ওয়ালমার্টের মতো বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের চীনে যাতায়াতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।