নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি হল অস্ট্রেলিয়ার ল্যাবে

চীনের বাইরে প্রথমবারের মত ল্যাবরেটরিতে নভেল করোনাভাইরাসের একটি প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2020, 07:51 AM
Updated : 29 Jan 2020, 02:25 PM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেলবোর্নের পিটার ডোহার্টি ইনিস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটির বিজ্ঞানীরা একে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণায় একটি ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’হিসেবে দেখছেন।

এই গবেষণার ফলাফল তারা ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, রোগ শনাক্ত করার পাশাপাশি প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রেও তাদের এই গবেষণা বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

এর আগে চীনের গবেষকরাও পরীক্ষাগারে নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম হন এবং এর জিন বিন্যাস প্রকাশ করেন। তবে নতুন তৈরি ভাইরাসের নমুনা তারা কাউকে দেয়নি।   

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলীয় গবেষকরা জানান, এক রোগীর শরীর থেকে পাওয়া নমুনা ব্যবহার করেই নোবেল করোনাভাইরাসটি তারা তৈরি করেছেন।

গত শুক্রবার নমুনা পাওয়ার পর এত দ্রুত কীভাবে প্রতিলিপি তৈরি করা সম্ভব হল তার ব্যাখ্যায় ডোহার্টি ইনিস্টিটিউটের উপপরিচালক মাইক ক্যাটন বলেন, “এ ধরনের একটি ঘটনার জন্য আমরা বহু বহু বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি, মূলত সে কারণেই আমরা এত দ্রুত সাফল্য পেয়েছি।”

তবে শুধু প্রতিলিপি তৈরির সাফল্যই যে পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দেবে না, আরও অনেক কাজ যে সামনে বাকি, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। 

এই প্রথম চীনের বাইরে নভেল করোনভাইরাস উৎপদান করা হলো। ছবি: পিটার ডোহার্টি ইনিস্টিটিউট ফর ইনফেকশন এন্ড ইমিউনিটি

২০১৯ সালের শেষ দিনটিতে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহানে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঘটনা ধরা পড়ে। 

তারপর থেকে চীনে এ ভাইরাসের সংক্রমণে ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪ জন। আর চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও ১৭ জায়গায় অন্তত ৭০ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৫ জনে। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।

২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মতই একই পরিবারের সদস্য এ নভেল করোনাভাইরাস, যারা ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।

এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতই এ ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। পরিস্থিতি রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি বিকল হওয়ার দিকে মোড় নিলে ঘটতে পারে মৃত্যু।

মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমণের পর লক্ষণ দেখা দিতে পারে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। আর এ কারণেই চীনে এ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি শনাক্ত করার কোনো উপায় হয়ত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণায় পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে। পাশাপাশি এই হবেষণা নভেল করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে পথ দেখাতে পারে।