থাইল্যান্ডে সুনামি: কয়েকশ লাশের পরিচয় মেলেনি দেড় দশকেও

দেড় দশক আগে ভারত মহাসাগরে হওয়া ভয়াবহ সুনামিতে থাইল্যান্ডে মৃত কয়েকশ ব্যক্তির পরিচয় এখনও বের করতে পারেনি পুলিশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 09:40 AM
Updated : 16 Dec 2019, 10:09 AM

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর, বক্সিং ডে’র সেই সুনামি কয়েকটি দেশের দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

থাইল্যান্ডে নিহতদের মধ্যে কয়েকশ ব্যক্তির পরিচয় আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র দক্ষিণ থাইল্যান্ডের একটি থানার কার্গো কন্টেইনারে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কন্টেইনারের ভেতর আলাদা আলাদা থলের মধ্যে রাখা এসব জিনিসপত্রের মধ্যে আছে, মানিব্যাগ, বিভিন্ন কাগজপত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্য। যে নিহতদের কাছ থেকে এসব উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মৃতদেহগুলো নিকটবর্তী একটি গোরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছে। পৃথক পৃথক সংখ্যা দিয়ে কবরগুলো চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।

কবরের এ সংখ্যাগুলো একদিন তাদের প্রকৃত নাম ফিরে পাবে আর কন্টেইনারে রাখা জিনিসপত্রই তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা থাইল্যান্ড পুলিশের। 

“এখনো এ নিহতদের, কাছের বা দূরের আত্মীয়রা, তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়ার আশা নিয়ে আছে,” বলেছেন তাকুয়া পা জেলার পুলিশের সহকারী কমান্ডার কর্নেল খেমমারিন হাসিনি।  

১৫ বছর আগে ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের পরপরই ভারত মহাসাগরের সুনামিটি যেসব এলাকায় আঘাত হানে, থাইল্যান্ডের এ তাকুয়া পা জেলাও তার মধ্যে ছিল।

দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া সেবারের সেই ভূমিকম্প ও সুনামি ডজনের বেশি দেশের সমুদ্র উপকূল তছনছ করেছিল; কোথাও কোথাও ঢেউ উঠেছিল ৫৭ ফুট উচ্চতায়; কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য এলাকা।

ওই সুনামিতে থাইল্যান্ডে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ৩০টি দেশের পুলিশ ও ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ডিজাস্টার ভিকটিম আইডেন্টিফিকেশন ইউনিট (ডিভিআই) মাত্র দুই বছরের মধ্যেই থাইল্যান্ডে ৩ হাজার ৬০০রও বেশি মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তের কাজ শেষ করে।

আন্তর্জাতিক ওই দলে কর্নেল খেমমারিনও ছিলেন। ১৫ বছরে ‘যোগাযোগের অনেক চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে’ এবং যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছিল, তাও থেমে গেছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

“আমরা যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই এবং ফের আমাদের অভিযানগুলোকে সক্রিয় করি, তবে আমার ধারণা অশনাক্ত অবস্থায় থাকা  ৩৪০টি  মৃতদেহের পরিচয় বের করা সম্ভব,” বলেছেন তিনি।

তাকুয়া পা শহরের কাছাকাছি গ্রাম বান নাম খেমে বাস করেন ৭৬ বছর বয়সী হিন তেমনা; দেড় দশক আগের ভয়াবহ ওই দুর্যোগে কেবল তার গ্রামেরই দেড় হাজারের বেশি লোক মারা গিয়েছিল। এর মধ্যে আছে তেমনার পরিবারেরও সাত সদস্য; বড় মেয়ে এখনও নিখোঁজ।

“মেয়েকে পাবো এমন আশা করে কী লাভ; মনে হয় না আর পাবো,” বলেছেন তিনি।