যুক্তরাজ্যে নির্বাচন: শেষ মুহূর্তের প্রচারে জনসনের চমক

১২ ডিসেম্বর নির্বাচন যুক্তরাজ্যে। চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত প্রচার।এরই মধ্যে নতুন চমক দেখিয়ে দেশের মানুষকে ফের ব্রেক্সিটের বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।নকল দেওয়াল গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে জনসন দেখিয়েছেন এভাবেই ব্রেক্সিটের পথে এগুতে চান তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 04:46 PM
Updated : 11 Dec 2019, 06:10 PM

প্রচারের অন্তিম সময়ে এসে জনসনের এই নির্বাচনী স্টান্ট এর ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা শোলার তৈরি ইট দিয়ে সাজানো একটি নকল দেওয়াল। উল্টো পাশ থেকে একটি জেসিবি গাড়ি সেই দেয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে এল। গাড়িটির সামনে লেখা, ‘গেট ব্রেক্সিট ডান’। দেয়াল ভেঙে গাড়িটি বেরিয়ে আসতেই দেখা গেল চালকের আসনে বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

তারপর সেখান থেকে নেমে এসে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়লেন জনসন। জনগণকে বুঝিয়ে দিলেন, পার্লামেন্টে বেক্সিট নিয়ে জট কাটিয়ে এভাবেই অগ্রসর হবেন তিনি। জেসিবি গাড়ি দিয়ে দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসাটা তারই প্রতীক।স্ট্যাফোর্ডশায়ারের একটি জেসিবি তৈরির কারখানায় জনসন এটি করেছেন।

এবারের নির্বাচনী প্রচারে গোটা সময় জুড়েই জনসনের কনজারভেটিভ দলের প্রচারের অন্যতম বিষয় বেক্সিট। প্রতিটি পাড়া,মহল্লায় টোরি দলের ব্রেক্সিটের প্রচার শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়া জাতিকে এ চমক দিয়ে জনসন বিষয়টিকে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এলেন।স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ভিডিওটি।

‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট’ পত্রিকা জানায়, ব্রেক্সিটের এ বার্তা দিয়ে জনতার উদ্দেশে এক ভাষণে জনসন বলেছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার ভোট। আমি মনে করি প্রতীকীভাবে গোটা জাতিরই এখন এই জেসিবি গাড়িতে বসে পার্লামেন্টে তৈরি হওয়া জট এভাবেই ভাঙার সময় হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই দেয়াল সরাতে পারব বলেই আমি আশাবাদী।’’

যদিও জনসনের এই স্টান্টে সবাই চমকৃত হননি।অনেকেই ব্রেক্সিটের জট পুরোপুরি জনসনের তৈরি বলে তার দিকে আঙুল তুলেছেন।কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলেছেন,“জনসন তো কেবল জেসিবি চালিয়ে একটি শোলার দেয়ালই ভেঙেছেন।এটাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী।” অনেকে আবার শোলা মোটেও পরিবেশবান্ধব নয় বলেও জনসনকে কটাক্ষ করেছেন এবং এমন একটি জিনিস ব্যবহারের সঠিক সময়ও এটি নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচার চালাচ্ছে প্রধান দুই দল:

প্রধানমন্ত্রী জনসন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশবাসীকে এ বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে, নির্বাচনে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করলে ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ) থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন(ব্রেক্সিট)। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ বিরোধী শিবির একেবারেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রেক্সিটের প্রচার চালাচ্ছে।

বিরোধীদল লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসলে ছয়মাসের মধ্যে একটি নমনীয় ব্রেক্সিট চুক্তি করার ওপর গণভোট করার প্রস্তাব দিচ্ছেন। কিন্তু জনসন প্রচারে ব্রেক্সিটকে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন করবিন ততটা দিচ্ছেন না। বেক্সিটের পেছনে বেশি সময় ব্যয় না করে বরং করবিন দেশের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন বিষয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশে কয়েকবছর ধরে চলা কৃচ্ছ্র্রর অবসান, তহবিল বাড়ানো, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাও তার প্রচারে অনেকটাই গুরুত্ব পাচ্ছে।

নির্বাচন এ সময়ে কেন হচ্ছে?

মূলত বেক্সিট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা থেকেই যুক্তরাজ্যে নির্বাচন হতে চলেছে এই সময়ে।যা হওয়ার কথা ছিল আদতে ২০২২ সালে।সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে পারলামেন্টে তার ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে তিন ‍তিনবার ব্যর্থ হয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।জনসন ক্ষমতায় এসেও তার নিজের ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে তেমনিই নাকাল হয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকর করা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে তিনি এ সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন যে,নির্বাচন করা ছাড়া আর পথ নেই।

তবে এ পদক্ষেপে সমর্থন লাভেও বেগ পেতে হয়েছে জনসনকে।দুই দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ  হওয়ার পর তিনি ফের চেষ্টা করেন। পরে কয়েক সপ্তাহের বিতর্ক শেষে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারাও জনসনের নির্বাচনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে এবং তারপরই নিরধারিত হয়েছে দিনক্ষণ।