আমাকে ছাড়া নির্বাচন হলেও সমস্যা নেই: মোরালেস

বলিভিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস বলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে, তাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হলেও তাতে তার কোনো ‘সমস্যা নেই’।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 05:06 AM
Updated : 16 Nov 2019, 05:06 AM

বামপন্থি এ নেতার এমন অবস্থান দেশটিতে জিনাইন আনিয়েজ নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ও মোরালেসের মুভমেন্ট ফর সোশালিজম (এমএএস) দলের মধ্যে বিরোধ মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিতর্কিত এক নির্বাচনের ফল নিয়ে বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে সেনাবাহিনী মোরালেসকে পদত্যাগ করতে বললে আদিবাসী এ নেতা তাতে সাড়া দিয়ে মেক্সিকোতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

তার এ পদত্যাগ প্রত্যাখ্যান ও সিনেটের অনুমোদন ছাড়া আনিয়েজের নিজেকে ‘অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকেই রাজধানী লা পাজ ও বলিভিয়ার বিভিন্ন শহরে মোরালেস সমর্থকরা অবস্থান নিয়ে আছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এমএএস নেতৃত্বাধীন সিনেট মোরালেসের পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ না করায় বামপন্থি এ নেতা কার্যত এখনও দেশটির প্রেসিডেন্ট পদেই আছেন।

মেক্সিকোতে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনিও সেকথাই বলেছেন।

“গণতন্ত্রের স্বার্থে, তারা যদি আমাকে নির্বাচনে দেখতে না চায়, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি কেবল বিস্মিত হচ্ছি, ইভোকে নিয়ে তাদের এত ভয় কেন?,” প্রশ্ন বলিভিয়ার প্রথম এ আদিবাসী প্রেসিডেন্টের।

তার এ পদত্যাগকে কেন্দ্র করে লাতিনজুড়ে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও পর্যবেক্ষকদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

সাক্ষাৎকারে মোরালেস তার দলের সঙ্গে বিরোধীদের আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বলিভিয়ার সংবিধান অক্ষুণ্ন রাখতে হলে আগামী জানুয়ারির মধ্যেই দেশটিকে একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও সরকার বেছে নিতে হবে।

“এ কারণেই ডান ও বামদের মধ্যে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন তিনি।

তিনি প্রার্থী না হলে, তার দল কাকে বেছে নেবে তার উত্তরে ৬০ বছর বয়সী মোরালেস বলেন, “জানি না, জনগণই বেছে নিক।”

বলিভিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা এ প্রেসিডেন্টের হাত ধরেই গত দেড় দশকে বলিভিয়ার অর্থনীতিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে; লাতিনের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে পরিণত হয়েছে সম্ভাবনাময় দেশে।

মোরালেস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই বলিভিয়ায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। সহিংসতা এড়াতেই তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

মেক্সিকোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও তার জন্য বিমান পাঠাতে প্রস্তাব দিয়েছিল বলেও জানান সাবেক এ কোকাচাষী।

“যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বিমান পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে আমরা যেখানে যেতে চাই সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। আমি নিশ্চিত যে তারা আমাদের গুয়ানতানামো কারাগারে নিয়ে যেত,” হাসতে হাসতে বলেন মোরালেস।

দ্রুত দেশে ফেরার আকুতিও ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে।

“প্রয়োজনে কেবল দলের একজন কর্মী হিসেবে ফিরে যাবো। আমার সংগঠন করার অভিজ্ঞতা, নির্বাচনী প্রচারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো,” বলেন মোরালেস।

মেক্সিকোতে থাকা অবস্থায় মিত্র ও সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে জানালেও এখানে বসে বলিভিয়ায় আনিয়েজ সরকারবিরোধী আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

বলেছেন, যেসব শ্রমিক ইউনিয়ন ও গোষ্ঠীকে তার সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেগুলো তার ‘নির্দেশই মেনে চলে এমন ঘুঁটি’ নয়।  

সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে মোরালেসের কাছে গ্রিসের সাবেক সোশালিস্ট প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপারাসের ফোন আসে বলে জানায় রয়টার্স।

ক্ষমতাচ্যুত এ প্রেসিডেন্টকে দেশে ফেরার সুযোগ দিলেও তাকে নির্বাচনে জালিয়াতি ও অন্যান্য অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে বলে শুক্রবারও বলেছেন বলিভিয়ার স্বঘোষিত ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ আনিয়েজ।

মোরালেসের দল এমএএসের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে মোরালেস বলিভিয়ায় প্রেসিডেন্টের মেয়াদবৃদ্ধির গণভোটের ফল না মেনে ‘হয়তো ভুল করেছি’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

বামপন্থি এ নেতাকে চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবার সুযোগ দিতে ওই গণভোট হয়েছিল। গণভোটে হারলেও পরে সাংবিধানিক আদালত আদিবাসী এ নেতার নির্বাচনী প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

“দল আমাকে চতুর্থবার নির্বাচন করতে বলেছে। সেটা না শোনাই উচিত ছিল। আমি সবসময়ই জনগণের কথা শুনেছি,” বলেছেন বলিভিয়ার অসংখ্য মানুষের আইকন এ বামপন্থি নেতা।