বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের পদত্যাগ

গত মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিতর্কিত জয় নিয়ে অস্থিরতার জেরে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস পদত্যাগ করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 03:54 AM
Updated : 11 Nov 2019, 05:11 AM

রোববার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো ২০ অক্টোবরের ভোটে ‘জালিয়াতির স্পষ্ট প্রমাণ’ পেয়েছে জানিয়ে নির্বাচনের ফল বাতিলের আহ্বান জানায়।  

তাদের সঙ্গে একমত হয়ে মোরালেস নির্বাচন কমিশন সংস্কার করার পর নতুন নির্বাচনের ডাক দেওয়ার ঘোষণা দেন।

কিন্তু তার এ ঘোষণা মেনে না নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা, সেনাবাহিনী প্রধান ও পুলিশ প্রধান তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।

এরপর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে মোরালেস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, জানিয়েছে বিবিসি।

বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ভাই ও বোনদের ওপর হামলা বন্ধ করুন, জ্বালাও পোড়াও ও হামলা বন্ধ করুন।”

এর আগে তার মিত্রদের কয়েকজনের ওপর হামলা হয়। তাদের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বলিভিয়া অস্থির হয়ে ছিল। 

নির্বাচনের দিন রাতে ভোট গণনা ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মোরালেস প্রথম পর্বে সরাসরি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। বিরোধীদলগুলো নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে আসে।

তারপর থেকে চলা অস্থিরতায় অন্তত তিন জন নিহত হন। এক পর্যায়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উর্দি পরা কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) রোববার জানায়, ব্যাপক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে আর তারা ভোটের ফলাফলের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারবে না।

দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মোরালেসের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করে। তার কয়েকজন রাজনৈতিক মিত্র পদত্যাগ করেন। কয়েকজন তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান।

মোরালেসের পদত্যাগের পর লা পাজের রাস্তায় সরকারবিরোধীদের বিজয় মিছিল। ছবি: রয়টার্স

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উইলিয়াম কালিমান ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়’ প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।

কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করলে তা প্রতিহতে অভিযান পরিচালনা করবে বলেও সতর্ক করে সামরিক বাহিনী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সামরিক বাহিনীর অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পর রাতে রাজধানী লা পাজের রাস্তায় সংঘর্ষ ও কিছু ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

পদত্যাগের ঘোষণায় মোরালেস বলেন, “আমি পদত্যাগ করছি। আমার পদত্যাগ পত্র আইনসভার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আদিবাসী প্রেসিডেন্ট ও সকল বলিভিয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শান্তির চেষ্টা করা আমার দায়িত্ব।”

পরে এক টুইটে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের কাছে ‘অবৈধ’ একটি পরোয়ানা আছে এবং ‘সহিংস গোষ্ঠীগুলো’ তার বাড়ি আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ করেন।

কিন্তু এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলিভিয়া পুলিশের কমান্ডার মোরালেসকে গ্রেপ্তারের কোনো পরোয়ানা তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন।

মোরালেসের পাশাপাশি বলিভিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আলবারো গার্থিয়া লিনেরাও পদত্যাগ করেছেন।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি প্রথম প্রেসিডেন্ট মোরালেস ১৪ বছর ধরে একটানা বলিভিয়ার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার আমলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে এবং বলিভিয়ার দ্রারিদ্রের হার কমে অর্ধেকে নেমে আসে।

তারপরও চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকের পাশাপাশি নিজ মিত্রদের অনেকের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়।