তুরস্কের অভিযানের মধ্যেই কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আইএসের গাড়িবোমা হামলা

সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলে তুরস্কের বিমান ও মর্টার হামলার মধ্যেই কুর্দি নিয়ন্ত্রিত শহর কামিশলিতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2019, 08:01 AM
Updated : 12 Oct 2019, 09:18 AM

শুক্রবারের এ হামলায় তিন বেসামরিক নিহত ও আরও নয়জন আহত হয়েছে বলে সেখানকার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে আঙ্কারার ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ শুরুর পর ওই অঞ্চলে এটিই আইএসের প্রথম হামলা, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলারা সিরিয়া থেকে আইএস বিতাড়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

জঙ্গিগোষ্ঠীটির ‘খিলাফত’ ধ্বসিয়ে দেয়া কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) হাতেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পর দেশটির সবচেয়ে বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল।

আইএসের আটক জঙ্গিদের যে কারাগারগুলোতে রাখা হয়েছে সেগুলোও ছিল এসডিএফের তত্ত্বাবধানে।

তুর্কি বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণে বিপর্যস্ত কুর্দি নিয়ন্ত্রণাধীন সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর কামিশলির একটি কারাগার থেকে ৫ জঙ্গি পালিয়েছে বলে কুর্দিরা আগেই জানিয়েছিল।

জঙ্গিগোষ্ঠীটির সদস্য বিদেশি এক নারী পরে নিরাপত্তারক্ষীদের লাঠি ও পাথর দিয়ে আঘাত এবং তাঁবুতে আগুন ধরাতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন, বলেছে তারা। 

আইএস কামিশলিতে গাড়িবোমা হামলার দায় স্বীকার করে কুর্দি গেরিলারাই তাদের লক্ষ্য ছিল বলে জানিয়েছে।

হামলায় হতাহতদের সবাই বেসামরিক, বলছে কুর্দিরা।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপের পরপরই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সর্বাত্মক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন।

ফোনালাপে ট্রাম্প ওই এলাকা থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আইএসবিরোধী মিত্র কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের ‘ভয়াবহ ঝুঁকির’ মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলে তার দল রিপাবলিকান পার্টি থেকেই সমালোচনার শোর উঠেছে।

তুর্কি অভিযানের পাল্টায় মার্কিন প্রশাসন আঙ্কারার ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ইঙ্গিতও দিয়েছে।

এদিকে শুক্রবার তুর্কি অবস্থান থেকে কোবানের মার্কিন বাহিনীর ওপর গোলাবর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পেন্টাগন। ওই হামলায় মার্কিন বাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেছে তারা।

কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে মার্কিন সেনা সরলেও, কোবানেতে এখনও তাদের উপস্থিতি বিদ্যমান।

তুরস্ক পেন্টাগনের ওই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর একটি ঘাঁটির আশপাশ থেকে ‘উসকানিমূলক হামলার’ পর আঙ্কারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখালেও মার্কিন ঘাঁটির যেন কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করতে সেনাসদস্যরা সচেষ্ট ছিল।

“তুর্কি সেনাবাহিনী মার্কিন বাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি, কোথায় কোথায় আমাদের সৈন্যরা থাকছে, টহল দিচ্ছে তা সুস্পষ্টভাবে জানে,” বলেছেন মার্কিন বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে।

যুদ্ধপরিস্থিতি পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদুলরহমান অভিযানের প্রথম চারদিনে তুর্কি বাহিনী রাস আল আইন ও তেল আবায়াদের কাছাকাছি ৯টি গ্রাম দখলে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন।

‘অপারেশন পিস স্প্রিং’য়ে এখন পর্যন্ত এসডিএফের ৭৪ যোদ্ধা, তুর্কি সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীদের ৪৯ জন এবং ২০ বেসামরিক নিহত হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

আঙ্কারা অবশ্য চারদিনের অভিযানে চারশর মতো ‘কুর্দি সন্ত্রাসীকে’ হত্যার দাবি করেছে। দুই তুর্কি সেনার নিহতের বিষয়টিও স্বীকার করেছে তারা।

তুরস্কের অভিযানের বিরোধিতা করে চলতি সপ্তাহেই একটি বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এ বৈঠকে আঙ্কারার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে তুরস্কে থাকা সিরীয় শরণার্থীদের ইউরোপে ঢুকিয়ে দেয়া হবে, এরদোয়ানের এমন হুমকিরও পাল্টা জবাব দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক।

“শরণার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং তাদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করানো কোনোভাবেই মেনে নেবো না আমরা,” টুইটারে বলেছেন তিনি।