স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রতিবাদ থেকে নোবেলের দৌড়ে গ্রেটা

এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের দৌড়ে এগিয়ে আছেন মাত্র ১৬ বছরের সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গ । জলবায়ু সংকট মোকাবেলার জন্য স্কুল বাদ দিয়ে পরিবেশবাদী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল যে কিশোরী।

>>রয়টার্স
Published : 4 Oct 2019, 02:52 PM
Updated : 4 Oct 2019, 02:52 PM

আগামী সোমবার (৭ অক্টোবর) শুরু হচ্ছে এবছরের নোবেল বিতরণ। মনোনয়নের তালিকায় অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থাকলেও এবারের পুরস্কারটি গ্রেটাই জিতবেন বলে জোর জল্পনা চলছে।

তার পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বাজিও ধরছেন অনেকেই। এমনই কয়েকজন ইউরোপীয় নোবেল তালিকার সম্ভাবনাময় অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে গ্রেটাকেই রেখেছেন সামনের সারিতে।

তাদের কথায়, গ্রেটার আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী যে প্রভাব পড়েছে এবং জনমত তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনো যুক্তিতর্ক করা কঠিন। এ অর্জনই তাকে এতদূরে পৌঁছে দিয়েছে।

একা বিক্ষোভ শুরু করে যেভাবে বিশ্ব আন্দোলনের নেত্রী গ্রেটা:

*অগাস্ট ২০ ২০১৮: তখন গ্রেটা থানবার্গের বয়স ছিল ১৫। জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি নিয়ে স্কুল বাদ দিয়ে দীর্ঘ সময় সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে বসে ছিলেন এই কিশোরী।

*অগাস্ট ২৬ ২০১৮: তার সঙ্গে যোগ দেন অন্যান্য ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবকরাও। এভাবে গ্রেটার জলবায়ু আন্দোলন গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

*সেপ্টেম্বর ২০১৮: জলবায়ু ইস্যুতে প্রতি শুক্রবারই গ্রেটা স্কুলের ক্লাস বর্জন করে নিয়মিত ধর্মঘট শুরু করেন এবং তার এই সাপ্তাহিক  ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদেরও সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

*নভেম্বর ২০১৮: শুক্রবারের এ ধর্মঘটে সামিল হয় ২৪ টি দেশের ১৭ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী। ইউরোপজুড়ে উচ্চ-পর্যায়ের অনেক অনুষ্ঠানে থানবার্গ বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। পোল্যান্ডে জাতিসংঘ জলবায়ু আলোচনাতেও তিনি কথা বলেন।

*ফেব্রুয়ারি ২০১৯: গ্রেটার কথা ও কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের ৩০ টিরও বেশি দেশে বিক্ষোভ হয়। সুইডেন থেকে ব্রাজিল, ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।

*মার্চ ২০১৯: নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন গ্রেটা। আরো বিস্তৃত হয় তার আন্দোলন। স্কুল পড়ুয়াদের ধর্মঘটে সামিল হয় বিশ্বের ১৩৫ টি দেশের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।

*মে ২০১৯: টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালীর তালিকায় ওঠে গ্রেটার নাম। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছাপা হয় তার ছবি। এভাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন গ্রেটা।

*জুলাই ২০১৯: ফরাসি পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখতে গেলে রক্ষণশীল এবং কট্টর-ডাপন্থি আইনপ্রণেতারা গ্রেটাকে বয়কটের ডাক দেন এবং তাকে নিয়ে ‍উপহাস করেন।

*১ অগাস্ট ২০১৯: গ্রেটাকে নিয়ে এক অস্ট্রেলিয় কলামনিস্ট এন্ড্রু বোল্ট বিরূপ লেখা লিখলে এর কড়া জবাব দেন গ্রেটা।

*৫ অগাস্ট ২০১৯: আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনার জন্য ৩৭ টি ইউরোপীয় দেশের ৪৫০ জন তরুণ জলবায়ু কর্মী সুইজারল্যান্ডে জড়ো হয়।

*১৪ অগাস্ট ২০১৯: যুক্তরাজ্য থেকে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে যান গ্রেটা। এরই মধ্যে তার জলবায়ু আন্দোলনে সামিল হয় ১৬৯ টি দেশের ৩৬ লাখ মানুষ।

*২৮ অগাস্ট ২০১৯: জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে গ্রেটা কার্বন নির্গমন হয় না এমন একটি জাহাজে করে ইংল্যান্ড থেকে প্রায় ১৪ দিনের যাত্রা শেষে নিউ ইয়র্কের তীরে পৌঁছান।

*১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯: হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভ করে গ্রেটা তার মিশন নিয়ে পৌঁছে যান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দোরগোঁড়ায়।

*১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯: জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আগামী প্রজন্মের মত শুনতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শুনানির জন্য ডাকা হয় গ্রেটাসহ চার শিক্ষার্থীকে।

*২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯: জাতিসংঘ সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের সামনে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন গ্রেটা। জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে পর্যাপ্ত কাজ না  করার জন্য নেতাদের দুষেন তিনি। অভিযোগ করে গ্রেটা বলেন, “আপনারা আমাদের স্বপ্ন ও শৈশব চুরি করে নিয়েছেন আপনাদের ফাঁকা বুলি দিয়ে।”