খাশুগজির লাশ কাটা নিয়ে কৌতুক-হাস্যরসে মেতেছিল খুনিরা

তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশুগজি পৌঁছানোর আগেই তাকে কিভাবে হত্যা করে তার লাশ টুকরো টুকরো করা হবে তা নিয়ে কৌতুক এবং হাস্যরসে মেতেছিল খুনিরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2019, 05:12 PM
Updated : 1 Oct 2019, 05:21 PM

একটি গোপন অডিও টেপ-এ খুনিদেরকে ওই কৌতুক করতে শোনা গেছে। এমনকি হত্যার আগে খাশুগজিকে ‘কুরবানির পশু’ ও বলতে শোনা যায় তাদের। জাতিসংঘ তদন্তকারীরা টেপটি শুনেছেন।

খাশুগজি হত্যার দিন সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে রেকর্ড করা এ গোপন টেপ প্রকাশ পেয়েছে বিবিসি’র নতুন একটি ‘প্যানোরামা’ ডকুমেন্টারিতে।

খাশুগজিকে হত্যার সময় এবং আগে-পরে রেকর্ড হওয়া ৪৫ মিনিটের অডিও টেপটি জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত দলের হাতে তুলে দিয়েছে তুরস্ক। কনস্যুলেটে আড়িপাতার যন্ত্রের মাধ্যমে ওই অডিও রেকর্ড করা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদক অ্যাগনেস ক্যালামার্ড রেকর্ডিংটি শুনেছেন বলে জানায় কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

তিনি বলেন, “অডিওতে আমি খাশুগজিকে বলতে শুনি, ‘তোমরা কী আমাকে ইনজেকশন দিতে যাচ্ছ?’। জবাবে তাদের কেউ একজন বলেন, ‘হ্যাঁ’।”

খাশুগজি হত্যা নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সহায়তা করছেন ব্রিটিশ আইনজীবী হেলেন কেনেডি। তিনিও ওই অডিও রেকর্ডটি শুনেছেন।

বিবিসি টেলিভিশনের ডকুমেন্টারিতে তিনি বলেন, অডিওতে তারা সৌদি সাংবাদিক খাশুগজিকে ‘কুরবানির পশু’ বলেছে। সোমবার রাতে ওই তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

কেনেডি বলেন, টেপটিতে খুনিদেরকে “শরীর এবং নিতম্ব কী এভাবে এই ব্যাগে ঢোকানো যাবে?” এমন কথাও বলতে শোনা যায়। একজন ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট খাশুগজির দেহ কেটে টুকরা করেন বলে ধারণা কেনেডির।

তিনি বলেন, মৃতদেহ কাটা নিয়ে ওই ব্যক্তি বলছিলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করার সময় আমি সাধারণত গান শুনি। কখনো আমার হাতে এককাপ কফি এবং একটি সিগারেটও থাকে’।

“ওই ব্যক্তিকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘এই প্রথম আমি কোনো মৃতদেহ মাটিতে ফেলে টুকরো করছি…এমনকি আপনি যদি কসাইও হন তাও প্রাণীদেহ কিছুর সঙ্গে ঝুলিয়ে সেটি কাটেন’।

গতবছর ২ অক্টোবর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন খাশুগজি। সেখান থেকে তিনি আর বের হননি। পরে জানা যায় তাকে কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়েছে।

সৌদি রাজ পরিবারের এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন থেকে কড়া সমালোচক হয়ে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট খাশুগজি। বিশেষ করে নিজের শেষ কয়েকটি কলামে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশকে আধুনিক করার নানা উদ্যোগের সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

খাশুগজি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তুরস্ক তাকে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়েছে এবং সৌদি যুবরাজ তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করে।

শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে সৌদি আরব তাদের কনস্যুলেটের ভেতর খাশুগজিতে হত্যার কথা স্বীকার করে নেয়।

সৌদি যুবরাজও সদ্য মার্কিন পিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কে একটি তথ্যচিত্রে এ হত্যার দায় নিয়ে বলেছেন, তার আমলে সৌদি এজেন্টরা খাশুগজিকে হত্যা করেছেন, তাই এ হত্যার তার উপরও বর্তায়।