যুক্তরাজ্যের বেসামরিক বিমান পরিহন কর্তৃপক্ষ (সিএএ) বলছে, বিশ্বজুড়ে পর্যটন পরিচালনাকারী এই কোম্পানি ‘তাৎক্ষণিক সকল বিক্রি’ বন্ধ করে দিয়েছে।
এই ঘোষণার ফলে এ মুহূর্তে বিদেশে থাকা দেড় লাখের বেশি ব্রিটিশ পর্যটককে দেশে ফেরানোর জন্য নতুন করে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এটা শান্তিকালীন সময়ে সবচেয়ে বড় বৃটিশ প্রত্যাবাসন। অর্থাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়া এর আগে সরকারকে এতো বৃটিশ নাগরিককে একসঙ্গে দেশে ফেরানোর আয়োজন করতে হয়নি।
টমাস কুকের প্রধান নির্বাহী পিটার ফ্যাংকহসার বলেন, ১৭৮ বছরের পুরনো এই কোম্পানির এরকম পতন ‘গভীর আক্ষেপের বিষয়’।
তিনি কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে দেওলিয়া ঘোষণা করার কথা জানিয়ে লাখ লাখ গ্রাহক ও কয়েক হাজার কর্মীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
টমাস কুকের পতনের ফলে যুক্তরাজ্যে নয় হাজারসহ বিশ্বজুড়ে ২২ হাজার মানুষের চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
এখন প্রত্যাবাসনের ‘বিশাল’ ভারবহনকারী এসব কর্মীদের সঙ্গে ‘আন্তরিক আচরণ’ করতে অবকাশযাপনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শ্যাপস জানান, গ্রাহকদের বিনা খরচে দেশে ফেরাতে সরকার ও বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ এর মধ্যেই কয়েক ডজন উড়োজাহাজ ভাড়া করেছে।
টমাস কুকের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া নাগরিক ফেরাতে জরুরি এ কার্যক্রমের সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ম্যাটারহর্ন’।
সোমবার থেকে ব্রিটিশ পর্যটকদের যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রোববারই খালি বিমানগুলি বিদেশের পথে উড়তে শুরু করেছে।
১৮৪১ সালে লিসেস্টারশায়ারের কেবিনেট নির্মাতা টমাস কুকের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল এ কোম্পানি। তার নামে চালু হওয়া কোম্পানিটি বিশ্বের বিখ্যাত হলিডে ব্র্যান্ডগুলির অন্যতম। টমাস কুকের আগে পর্যটন কোম্পানির সফল ভাবনা আর আসেনি।
কেন এমন পরিণতি?
ব্যবসায়িক মন্দার মধ্যে চলতি বছরের অগাস্টে বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার চীনা সংস্থা ফোসুনের নেতৃত্বে ৯০ কোটি পাউন্ডের একটি পুনরুদ্ধার তহবিল যোগাড়ে সমর্থ হয়েছিল টমাস কুক।
কিন্তু কোম্পানিটির ঋণদাতা ব্যাংকগুলির তরফ থেকে জরুরি তহবিল হিসেবে আরও ২০ কোটি ডলার বাড়ানোর দাবি তোলায় ওই বিনিয়োগ চুক্তি সংশয়ের মধ্যে পড়ে।
“এই পরিণতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাই।”
এদিকে টমাস কুক রোববার সারাদিন বাড়তি তহবিল যোগাড়ের মাধ্যমে চুক্তি টিকিয়ে রাখতে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কোনো ফল আসেনি।
কোম্পানিটি সরকারের কাছেও আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল, যার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিও সুপারিশ করেছিল।
কিন্তু রোবাবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক র্যাব বিবিসিকে বলেন, ‘সুকৌশলগত জাতীয় স্বার্থ’ না থাকলে মন্দার ব্যবসা উদ্ধারে সরকার ‘পদ্ধতিগতভাবে পদক্ষেপ’ নেয় না।
টমাস কুক ব্যবসায় মন্দা জন্য তুরস্কের মতো পর্যটন গন্তব্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গত গ্রীষ্মের দীর্ঘ তাপপ্রবাহ এবং বেক্সিটের কারণে গ্রাহকদের বুকিং বিলম্বিত করাসহ একাধিক বিষয়কে দায়ী করে আসছিল।
তাছাড়া এখন অনেকেই ছুটির দিনে ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবহার না করে নিজেরাই একসঙ্গে বেড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।
তবে টমাস কুকের কার্যক্রম বন্ধ হলেও বিদেশে গ্রাহকদের হোটেল খরচসহ প্যাকেজভুক্ত যাবতীয় ব্যয় মেটানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করেছে সরকার।
পর্যটন শিল্পের দেওয়া করের টাকায় গঠিত একটি বিশেষ তহবিল (এয়ার ট্রাভেল ট্রাস্ট ফান্ড ও এয়ার ট্রাভেল অর্গানাইজার্স লাইসেন্স স্কিম- অ্যাটল) থেকে এ ব্যয় বহন করবে সরকার।