চীনা অপপ্রচার: টুইটারের তালিকায় ‘ভুল অ্যাকাউন্ট’

হংকংয়ের আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং সেখানে বিভেদের বীজ বপন করতে চীনের রাষ্ট্র সমর্থিত অপপ্রচারে যুক্ত সন্দেহে টুইটার চলতি সপ্তাহে যে ৯৩৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, ওই তালিকায় ‘ভুল অ্যাকাউন্ট’ আছে বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্যের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2019, 10:44 AM
Updated : 21 August 2019, 10:44 AM

লন্ডনের কিংস কলেজের শিক্ষার্থী লুকা ইভেজিক জানান, তার অ্যাকাউন্ট ‘টেক পলিটিসিস্ট’ হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগে মে মাস থেকেই স্থগিত ছিল।

সোমবার ‘হংকংয়ের আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চীনের ভেতর ও বাইরে থেকে পরিচালিত’ যেসব অ্যাকাউন্ট টুইটার বন্ধ করে দেয়, সে তালিকায় লুকার অ্যাকাউন্টও ছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ক্রোয়েশিয়ায় জন্ম নেওয়া এ শিক্ষার্থী জানান, তিনি কখনোই চীন যাননি; তার অ্যাকাউন্ট থেকে হংকংয়ের আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু নিয়ে টুইট, শেয়ার কিংবা অন্য কোনো টুইটে মন্তব্যও করা হয়নি।

২৪ বছর বয়সী লুকা সম্প্রতি ‘ডিজইনফরমেশন, অ্যান্ড হাউ আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ক্যান এমপাওয়ার দ্য টুলস দ্যাট চায়না অ্যান্ড রাশিয়া হ্যাভ টু মিসইনফরম আস’ বিষয়ে থিসিস করেছেন।

“এটা খানিকটা বিড়ম্বনার যে আমার ক্ষেত্রেই এমনটি হয়েছে,” চীনের রাষ্ট্র সমর্থিত অপপ্রচারে যুক্ত অ্যাকাউন্টের তালিকায় ‘টেক পলিটিসিস্ট’ এর অন্তর্ভুক্তির প্রতিক্রিয়ায় জানান এ শিক্ষার্থী।

সোমবার টুইটারের প্রকাশিত নথিতে সোশাল এ প্ল্যাটফর্মটি লুকার চারটি টুইটকে আপত্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল বলে দেখা গেছে। ওই টুইটের কোনোটিতেই হংকংয়ের আন্দোলন সংক্রান্ত কিছু ছিল না। ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিটকয়েন ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের কথা।

এ নিয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে টুইটার তাদের আগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা জানিয়ে বলে, “আমাদের দলের বিস্তৃত অনুসন্ধানের পর আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে এ অ্যাকাউন্টটি গতকাল (সোমবার) অপপ্রচারে লিপ্ত নেটওয়ার্কের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে সেখানে সংযুক্ত।”

এ ব্যাখ্যাকে ‘যথেষ্ট ও যৌক্তিক’ বলে মানতে পারছেন না লুকার বাবা মেরিন ইভেজিক। টুইটারের এ সিদ্ধান্ত তার ছেলের ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশঙ্কা তার।

মেরিন নিজেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, যারা প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারের অংশীদার।

বাপ-ছেলে দুজনে মিলে ‘ফিউচার অব লিডারশিপ’ নামে প্রযুক্তি বিষয়ক একটি ব্লগও চালান। ব্লগের মূল টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘লিডারশিপ এআই’-ও অনেক দিন ধরেই স্থগিত আছে; যদিও এটি সোমবারের তালিকায় স্থান পায়নি।

মেরিন বলছেন, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তিনি তার ও ছেলের অ্যাকাউন্টে অনুসারী বাড়াতে এক ফ্রিল্যান্সারকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ওই ফ্রিল্যান্সারের আনা অনুসারী কিংবা ইন্টারনেট বট লুকার অ্যাকাউন্ট বাতিলের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে, সন্দেহ তার।

টুইটারের নীতিমালায় অনুসারী ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। যেসব কোম্পানি অ্যাকাউন্টে অনুসারী বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে প্রলুব্ধ করে তারা সাধারণত বট ও স্প্যাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অনুসারী বাড়ায়; এটি যে কোনো ব্যক্তির অ্যাকাউন্টকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন।

অনুসারী নিয়ে নীতিমাল ভঙ্গে অ্যাকাউন্ট বাতিল হতে পারে- এমনটা সন্দেহ করলেও চীনা অপপ্রচারে যুক্ত অ্যাকাউন্টগুলোর তালিকায় ছেলের নাম মানতে পারছেন না মেরিন।

ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা বিবেচনা করে টুইটার পরে অপপ্রচারে লিপ্ত অ্যাকাউন্টের তালিকা থেকে লুকার অ্যাকাউন্টটির নাম সরিয়ে নেয়; তবে ‘টেক পলিসিসিস্ট’ অ্যাকাউন্টটি চীনের রাষ্ট্র সমর্থিত কার্যক্রমেই জড়িত ছিল- এমন সিদ্ধান্তে তারা এখনো অনড়বলে জানিয়েছে বিবিসি।