স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার ওই আইএনএফ চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার জন্য স্টলটেনবার্গ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দুইজনই রাশিয়াকে দোষারোপ করেছেন। স্টলটেনবার্গ বলেন, “চুক্তি ভাঙার জন্য রাশিয়া এককভাবে দায়ী।”
ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা রাশিয়ার দেখাদেখি কাজ করব না। নতুন কোনো অস্ত্র প্রতিযোগিতা আমরা চাই না। আর আমাদের ইউরোপের মাটিতে নতুন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনাও নেই।”
রাশিয়া সহযোগিতা করছে না অভিযোগে পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার ‘ইন্টারমেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চুক্তিটিতে ৫০০ কিলোমিটার থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল।
নেটো এবং যুক্তরাষ্ট্র দুইই অভিযোগ করে বলেছে, রাশিয়া নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তবে রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দুই পরাশক্তির পারমাণবিক চুক্তিটি স্বাক্ষরের ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর তা ভেস্তে যাওয়ায় এখন নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা জেগে উঠেছে।
ঝুঁকিটা কি?
আইএনএফ চুক্তি এতদিন আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ হাতিযার হিসেবে কাজ করেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি বাড়বে।
বিশেষত রাশিয়ার ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্র (নেটো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে এসএসসি-৮ নামে ডাকে) গুরুতর হুমকি হয়ে থাকবে নেটো জোটের নিরাপত্তায়।
নেটো মহাসচিব স্টলটেনবার্গ বলেছেন, নেটো জোট রাশিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবে।
গত মাসে নেটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বিবিসি’কে বলেছিলেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম, সহজে বহনযোগ্য, রাডার ফাঁকি দিতে ওস্তাদ এবং ইউরোপের যেকোনো শহরে কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে সক্ষম।
“এটি নিশ্চিতভাবেই আইএনএফ চুক্তির লঙ্ঘন এবং খুবই গুরুতর। গত কয়েক দশক ধরে আইএনএফ চুক্তি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু এখন আমরা ওই চুক্তির লঙ্ঘন দেখতে পাচ্ছি”, বলেছিলেন তিনি।
ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে নুতন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা বিষেশজ্ঞদের।
চুক্তিটি ভাঙল কেন?
গত বছর আমেরিকানরা জানিয়েছিল, আইএনএফ চুক্তির আওতার বাইরের এলাকায় রাশিয়ার নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ার প্রমাণ তারা পেয়েছে।
এরপর রাশিয়ার ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে অভিযোগ জানানো হয় ওয়াশিংটনের নেটো মিত্রদের কাছে। তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকেই সমর্থন করে।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া চুক্তি না মেনে চললে এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ২ অগাস্ট দিন নির্ধারণ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
এরপরপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চুক্তির আওতায় যেসব বাধ্যবাধকতা ছিল তা মেনে চলা বন্ধ করে দেন।
এ পদক্ষেপ নিয়ে রাশিয়া চুক্তি ভঙ্গ করেছে জানিয়ে শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, “চুক্তি ভেঙে পড়ার জন্য রাশিয়াই পুরোপুরি দায়ী।”
ওদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও এদিন এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপেই আইএনএফ চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটেছে।”