গুজবে ‘মৃত’ তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট কি বেঁচে আছেন?

সাধারণত কোনো প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর গুজব খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান, যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই; সেখানে কোন তথ্য পাওয়ার সুযোগ না থাকার কারণে গুজবই দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2019, 03:42 PM
Updated : 24 July 2019, 04:14 PM

বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন অতি রক্ষণশীল দেশ তুর্কমেনিস্তানে প্রায় সময় গুজবই তথ্য পাওয়ার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়।

বিবিসি জানায়, গত সপ্তাহের শেষ দিকে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবানগুলি বেরদিমুখামেদভের মৃত্যুর খবর ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি রেডিও স্টেশনের ওয়েবসাইটে এবং বিরোধীদলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রেসিডেন্ট বেরদিমুখামেদভ কিডনি জটিলতায় ভুগে মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশ করে। তাদের তথ্যের উৎস ছিল গুজব।

মধ্য এশিয়ার নানা বিষয় নিয়ে কাজ করেন এমন একজন হচ্ছেন আসলান রুবায়েভ। তিনি মস্কোর ওই বেতারকে বলেছিলেন, যারা তাকে প্রেসিডেন্ট বেরদিমুখামেদভের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন তারা দেশটির রাজধানী আশগাবাতে বসবাস করেন এবং পেশায় ব্যবসায়ী।

বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের গুজবের অস্তিত্ব মাত্র কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন হলেও তুর্কমেনিস্তানের বেলায় তা হয়নি।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো এ গুজব লুফে নেয়। দেশটির প্রধান কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও  তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর প্রকাশ পায় বলে জানায় বিবিসি।

এছাড়া, রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্টর মৃত্যুর গুজব ভাইরাল হয়ে যায়।

তবে খোদ তুর্কমেনিস্তানে এ গুজব তেমন ছড়াতে পারেনি। কারণ দেশটিতে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ‍উপর সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণ।

রিপোর্টারস উইদাউট বডার্স সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে ২০১৯ সালে তুর্কমেনিস্তানকে সবচেয়ে খারাপ দেশে বলেছে। এমনকি উত্তর কোরিয়ার চাইতেও সেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কম।

তুর্কমেনিস্তানে সব সংবাদমাধ্যম সরকার নিয়ন্ত্রিত। অল্প যে কয়েকজন সাংবাদিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের জন্য কাজ করেন তাদের নিয়মিত হেনেস্থার শিকার হতে হয়। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে কাজ করেন।

এমন দেশে গুজবই তথ্য পাওয়ার একমাত্র পথ। তাই যখন প্রেসিডেন্টের মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াল তখন তা দাবানলের মতই ছড়িয়েছে।

বিবিসি জানায়, গত ৫ জুলাইয়ের পর প্রেসিডেন্ট বেরদিমুখামেদভকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। এমনকি গত ৬ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান ফ্রেডেরিকা মঘেরিনি রাজধানী আশগাবাতে একদিনের সফরে গেলে তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেননি বেরদিমুখামেদভ।

এভাবে রেদিমুখামেদভের জনসম্মুখে না আসা এবং এ নিয়ে আশগাবাতের একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া মৃত্যুর গুজবে জ্বালানি হয়েছে।

তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এখন পর্যন্ত এ গুজবের সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার করে কোনো খবর দেয়নি। বরং তারা প্রেসিডেন্টের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে নিয়মিত খবর প্রকাশ করেছে।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিরোধী একটি ওয়েবসাইট প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর গুজবটি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে- এই বলে যে, প্রেসিডেন্টকে দেখা যাচ্ছে না। কারণ, তার মা গুরুতর অসুস্থ এবং তাকে সম্ভবত জার্মানির হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তুর্কমেনিস্তান পরিস্থিতি শান্ত এবং কাজকর্মও যথারীতি চলছে বলেও জানায় সাইটটি।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গুজবকে অনেক সময় মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, জনশ্রুতিতে যে একেবারে বাস্তবতা থাকে না তাও নয়।

ফলে, প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ‍গুজবটি পরে মিথ্যা বলে রাশিয়ায় তুর্কমেনিস্তানের দূতাবাসের কর্মকর্তারাসহ কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান সরব হলেও এমনকী এশিয়া বিষয়ক পন্ডিতরা ওই তথ্য নিশ্চিত নয় জানিয়ে জনগণকে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইলেও গুজব পুরোপুরি দূর হয়নি।

কারণ, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু নিয়ে সচরাচর এমন জল্পনা হয়ই। যদিও প্রেসিডেন্ট আসলেই মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সেসব গুজব মিথ্যা বলেই প্রতীয়মান হয়।

তবে প্রতিবেশী উজবেকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইসলাম কারিমভের মৃত্যু নিয়ে ২০১৬ সালে ছড়িয়ে পড়া গুজব পরে সত্য হতেই দেখা গিয়েছিল। কারিমভের মৃত্যুর খবর সরকারিভাবে নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত একসপ্তাহ ধরে তার মারা যাওয়ার গুজব শোনা যাচ্ছিল।

সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে সময় নেওয়ার জন্যই প্রথমে কারিমভের মৃত্যুর কথা জানায়নি বলে ধারণা করা হয়। আর এ কারণেই ওই অঞ্চলে মানুষজন দেশের নেতাদের মৃত্যুর গুজবকে আমলে না নিয়ে পারে না। কারণ, নেতাকে জনসম্মুখে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত গুজব পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।