অবশেষে ভারতের চন্দ্রযান-২ এর সফল উৎক্ষেপণ

অবশেষে মানুষবিহীন মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে ভারত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2019, 12:24 PM
Updated : 22 July 2019, 12:24 PM

এক সপ্তাহ আগেই মহাকাশযানটির চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়েছিল।

দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) ওই দিনই ২২ জুলাই দ্বিতীয় দফা উৎক্ষেপণের তারিখ জানিয়ে দিয়েছিল।

বিবিসি জানায়,  অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধওয়ন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের লঞ্চ প্যাড থেকে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ০২টা ৪৩ মিনিটে  চাঁদের উদ্দেশে উড়ে গেছে চন্দ্রযান-২।

প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের এ অভিযানে সফল হলে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তুলনায় ২০ ভাগের একভাগ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর জন্য তা হবে বিরাট এক মাইলফলক।

চন্দ্রযান-২ এর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা রয়েছে। যদি সেটি সফলভাবে অবতরণ করতে পারে তবে চন্দ্রজয়ী দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ নাম হবে ভারত। এর আগে কেবল রাশিয়া (সোভিয়েত রাশিয়া), যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চন্দ্রজয় করেছিল।

৬৪০ টন ওজনের, ১৫ তলা উঁচু অরবিটার বাহুবলী (এ জিএসএলভি এমকে থ্রি রকেট) চন্দ্রযান-২ কে চাঁদে নিয়ে যাচ্ছে। এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ ও রোভারের না ‘প্রজ্ঞান’ রাখা হয়েছে।

চাঁদের যে অংশে চন্দ্রযান-২ এর নামার কথা এর আগে সেখানে কোনো দেশের কোনো মহাকাশযান নামেনি।

২০০৮ সালে চাঁদের কক্ষপথে যাওয়া ভারতের প্রথম মহাকাশযান চন্দ্রযান-১ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহে থাকা হাইড্রক্সিল আয়নের হদিস পেয়েছিল।

এবারের দ্বিতীয় অভিযানের উদ্দেশ্য চন্দ্রপৃষ্ঠের বালিকণায় থাকা খনিজ ও মৌল পদার্থ সম্বন্ধে জানা।

চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি, এ কারণে এ মহাকাশযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম পড়ছে।

চাঁদের বুকে পা রাখতে চন্দ্রযান-২কে তিন দশমিক ৮৪ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।

হিসাব অনুযায়ী, রওনা হওয়ার দেড় মাস পর চাঁদের পিঠে ‘বিক্রম’ এর নামার কথা। এরপর এ ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসবে ২৭ কিলোগ্রাম ওজনের ‘প্রজ্ঞান’।

ল্যান্ডারটি নেমে আসার সময় অরবিটারটি থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের দূরত্ব থাকবে মাত্র ১০০ কিলোমিটার।

চাঁদে অনুসন্ধান চালানোর পর রোভার ‘প্রজ্ঞান’ সেখানেই অকেজো হয়ে পড়বে; তবে তার তথ্য চলে যাবে ভারতের মহাকাশ কেন্দ্রে।

অরবিটারটি এরপরও মহাকাশে থাকবে; চাঁদকে প্রদক্ষিণের পাশাপাশি পাঠাবে একের পর এক ছবি।

যে খরচে ভারতের এ চন্দ্রাভিযান হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে হলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি ‘অ্যাভেঞ্জার: এন্ড গেইম’ বানাতেই।

ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এবং ইসরোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একাউন্টে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

উৎক্ষেপণের পর এক বক্তৃতায় ইসরো প্রধান কে শিভান বলেন, “এটা চাঁদের পথে ভারতের ঐতিহাসিক অভিযাত্রার শুরু।”তিনি এই অভিযানে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ অভিযানের প্রশংসা করেছেন।

এর আগে গত ১৫ জুলাই উৎক্ষেপণের নির্ধারিত সময়ের মাত্র ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চন্দ্রযান-২ এর যাত্রা  স্থগিত করা হয়েছিল। তখন ইসরো কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, চন্দ্রযান ২-কে বহনকারী রকেট ‘বাহুবলী’ থেকে প্রবল দাহ্য তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন বেরিয়ে যাচ্ছিল।

যেহেতু উৎক্ষেপণের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তাই দ্বিতীয়বার ‘ব্যাপক মাত্রায় সতর্কতা’ নিশ্চিত করতে চন্দ্রযান ২-র উড্ডয়ন পেছানো হয়।

“সমস্যাটি গুরুতর হলেও এর সমাধান ছিল সোজা। সৌভাগ্যবশত, আমরা আগেই সমস্যাটি ধরতে পেরেছিলাম। অন্যভাবে বললে, একশ কোটি ভারতীয়র প্রার্থনা ও শুভেচ্ছাই আমাদের এ অভিযানকে পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে,” বলেছিলেন ইসরোর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।