জাপানে অ্যানিমেশন স্টুডিওতে ‘নাশকতার’ আগুনে নিহত ৩৩

জাপানে কিয়োটোর একটি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে লাগা আগুনে অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরীর দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 05:31 AM
Updated : 18 July 2019, 01:27 PM

বৃহস্পতিবার সকালের এ ঘটনায় আরও ৩৬ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদমাধ্যম এনএইচকে। জাপানে দুই দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর এমন ভয়াবহ ঘটনা।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার সময় তিনতলা ওই স্টুডিও ভবনে আগুন লেগে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় গণমাধ্যমে দেওয়া পুলিশের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি কিয়োটো অ্যানিমেশন কোম্পানির স্টুডিও ভেঙে প্রবেশ করে চারদিকে অজ্ঞাত তরল ছিটিয়ে দেয়।

৪১ বছর বয়সী ওই সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। আটকের পর শরীরে জখম থাকার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কিয়োটো বিভাগীয় পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, “এক ব্যক্তি তরল ছুড়ে মেরে সেখানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।” ঘটনাস্থলে পুলিশ ছুরিও পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমে।

সন্দেহভাজনের বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য বা আগুন লাগানোর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

ওই ভবনে আগুন লাগানোর পর সন্দেহভাজনকে ‘অকালমৃত্যু’ বলতে শোনা গেছে বলে এনএইচকে জানিয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে সন্দেহভাজনের কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তাও স্পষ্ট নয়।

দমকল বিভাগের এক মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা তিনতলা ওই ভবনটিতে আটকা পড়া বেশ কয়েকজনকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি।” আটকা পড়াদের কাউকে স্টুডিওতে পাওয়া গেছে, কাউকে পাওয়া গেছে তিন তলায় আবার কাউকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়িতে পাওয়া গেছে ।

ঘটনাস্থলের কাছে থাকা লোকজন জানিয়েছেন, তারা টানা কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন, তারপর কম্বলে পেঁচিয়ে লোকজনকে বের করে আনতে দেখেছেন।

কয়েকটি খবরে বলা হয়েছে, ৩৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। আগুন লাগার সময় ভবনটিতে ৭০ জন ছিল বলে জানিয়েছেন দমকল কর্মকর্তারা।

রয়টার্স জানিয়েছে, স্টুডিওটি ‘সাউন্ড! ইফোনিয়াম’ সিরিজ তৈরি করে আসছিল এবং তাদের ‘ফ্রি! রোড টু দ্য ওয়ার্ল্ড- দ্য ড্রিম’ নামের সিনেমাটি চলতি মাসে রিলিজ হওয়ার কথা ছিল।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, এমন ঘটনায় তিনি বাকরুদ্ধ। ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি কে?

সর্বসাম্প্রতিক কয়েকটি খবরে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ওই কোম্পানির সাবেক কোনো কর্মী নন এবং স্টুডিওটির সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্রও নেই।

জাপানের পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়, আগুন জ্বলতে শুরু করার পর ওই ব্যক্তি ভবন থেকে পালিয়ে কাছাকাছি একটি স্টেশনের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মাটিতে পড়ে যান।

কয়েকটি খবরে বলা হয়েছে, কিয়োটো অ্যানিমেশনের কর্মচারীরা তাকে ধাওয়া করেছিল। কিয়োদো সংবাদ সংস্থাকে এক নারী জানান, “চুল পুড়ে যাওয়া এক ব্যক্তি মাটিতে পড়েছিল। সেখানে ছিল রক্তমাখা পায়ের ছাপ।”

এক প্রতিবেশীর ভাষ্য, “মনে হত যেন সে বিরক্ত এবং যন্ত্রণায় ভুগছে। আবার সে ক্ষুব্ধও ছিল।”

সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি আহত হয়েছে এবং তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনএইচকে।