চার দশক পর দেশটিতে জাপানের কোনো সরকারপ্রধানের এ সফরে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচি প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
বুধবার থেকে শুরু হওয়া সফরটিতে আবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ সফরের মাধ্যমে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করতে পারেন বলে মনে করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে কতটুকু অগ্রগতি হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে পর্যবেক্ষকদের। তবে এ যাত্রার কোনো সফলতা পেয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে আবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে তা কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন বলে মনে করছেন তারা।
চলতি বছর জাপান ও ইরান তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৯০তম বার্ষিকী পালন করছে।
জাপানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় সফরের কয়েকদিনের মধ্যে আবের ইরান যাত্রা এ সফরের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ওয়াশিংটন নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি বিমানবাহী রণতরী পাঠালে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
সফরে আবে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে দেশ দুটিকে আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা করবেন বলেও অনেকের ধারণা।
সফর শুরুর একদিন আগেও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইরান নিয়ে টেলিফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে মঙ্গলবার আবের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
পরমাণু কর্মসূচির লাগাম টানার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ওই জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি থেকে ওয়াশিংটন কেবল নিজেদের সরিয়েই নেয়নি, একইসঙ্গে তারা তেহরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করেছে।
এর পাল্টায় ইরান সম্প্রতি তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশন (আইএইএ)।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রচেষ্টায় একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইরানি তেল কেনায় বেশ কয়েকটি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছাড় থাকলেও গত মাসে তাও তুলে নেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপের প্রভাব জাপানের ওপরও পড়েছে।
ইরানের তেল ছাড়া জাপানের এখন চললেও মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সংঘাতে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তাতে জাপান বিপদে পড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপান নানাপাক্ষিক চ্যানেলে প্রায় সব দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিবদমান সব পক্ষের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তেল পেতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্যই টোকিও এটি করে, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
আবের এ সফর ওয়াশিংটন ও তেহরানের সম্পর্কের বরফ গলাতে তেমন ভূমিকা রাখবে না বলেও অনুমান তাদের।
জাপানের সরকারি কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রীর এ সফর থেকে বেশিকিছু প্রত্যাশা করছেন না বলে জানিয়েছে বিবিসি।