যে কারণে অনন্য নতর-দাম ক্যাথেড্রাল

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্যারিসের বিখ্যাত স্থাপনা নতর-দাম ক্যাথেড্রাল। আগুনে গির্জাটির ছাদ ধসে গেছে, উঁচু মিনারটিও ভেঙ্গে পড়েছে, তবে পাথরের মূল কাঠামোটি কোনোরকমে রক্ষা পেয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2019, 07:26 AM
Updated : 16 April 2019, 07:56 AM

আগুনে ক্যাথিড্রালটির ‘ব্যাপক ক্ষতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ইমানুয়েল গ্রেগরি। জরুরি বিভাগগুলোর কর্মীরা ক্যাথেড্রালে রাখা শিল্পকর্ম ও অমূল্য নিদর্শনগুলো রক্ষার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গির্জাটির অভ্যন্তরের কাঠের অংশগুলো পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্যারিসে বহু অনন্য ভবন থাকা সত্বেও সাড়ে আটশ বছরের পুরনো গথিক শৈলীর এই গির্জাটি কিছু নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ছিল। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী সেই বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হল।

রোজ উইন্ডো

গির্জাটিতে ১৩শ শতাব্দিতে তৈরি তিনটি রোজ উইন্ডো আছে।  গির্জাটির সবচেয়ে বিখ্যাত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।  এগুলোর কোনোটি আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে কি না তা এখনও পরিষ্কার হয়নি।

প্রথমটি ও সবচেয়ে ছোটটি আছে গির্জার পশ্চিম দিকের প্রবেশ পথের ওপরে। ১২২৫ সালের দিকে এটি তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল।

দক্ষিণের রোজটির ব্যাস প্রায় ১৩ মিটার (৪৩ ফুট) এবং এটি ৮৪টি প্যানেলের সমন্বয়ে তৈরি। 

তবে আগে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নির্মাণকালীন সময়ের স্টেইনড গ্লাসগুলো এতে আর ছিল না। 

দুই টাওয়ার

গির্জাটির পশ্চিম দিকের সামনের অংশে দুটি গথিক টাওয়ার রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।  গির্জাটি দেখতে আসা পর্যটকরা এই দুটি টাওয়ারের সামনে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে এর শৈলী উপভোগ করেন।

১২০০ শতাব্দিতে গির্জার পশ্চিম দিকের এই সম্মুখভাগটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল, কিন্তু উত্তর দিকের প্রথম টাওয়ারটি নির্মাণ কাজ ৪০ বছরের আগে শেষ করা যায়নি।  তবে দক্ষিণের টাওয়ারটি নির্মাণ কাজ ১২৫০ সালের মধ্যেই শেষ হয়। 

দুটি টাওয়ারই ৬৮ মিটার উঁচু। ৩৮৭টি সিঁড়ি টপকে উপরে উঠলে এখান থেকে প্যারিসের বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায়।

গার্গগয়েলস

যিনি ওই সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠতে পারবেন তিনি প্যারিসের বিস্তৃত দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এর পাশাপাশি তিনি গির্জাটির অন্যতম বিখ্যাত নিদর্শন গার্গগয়েলসও দেখতে পাবেন।

রহস্যময় পৌরাণিক এই জন্তুগুলো সাধারণত অনেকগুলো প্রাণীর বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ‘স্ট্রাইজ’ গার্গগয়েলস্ নামে পরিচিত সবচেয়ে বিখ্যাতটি ভবনের শীর্ষে বসে হাতে মাথা রেখে প্যারিস শহরের দিকে তাকিয়ে আছে।

ঘণ্টা

নতর-দাম গির্জায় ১০টি ঘণ্টা আছে।  ইমানুয়েল নামের সবচেয়ে বড়টির ওজন ২৩ টন। ১৬৮৫ সালে দক্ষিণ টাওয়ারে এটি স্থাপন করা হয়।

২০১৩ সালে গির্জাটির ৮৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের সময় উত্তর টাওয়ারের ছোট ঘণ্টাগুলোকে নতুন করে বানানো হয়।

ফরাসি বিপ্লবের সময় আসল ঘণ্টাগুলো গলিয়ে কামানের গোলা বানানো হয়েছিল। পরে সেগুলোর নমুনা বানিয়ে এক একজন সন্তের নামে প্রত্যোকটির নামকরণ করা হয়।

বিশ্ববিখ্যাত লেখক ভিক্টর হুগো গির্জাটিকে ১৮৩১ সালে তার লেখা উপন্যাস ‘দ্য হ্যাঞ্চব্যাক অব নতর-দাম’ এর পটভূমি করেছিলেন। তার উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ক্যাসিমুদু এই গির্জায় আশ্রয় পেয়েছিলেন এবং গির্জাটির ঘণ্টাবাদকের চাকরি পেয়েছিলেন।

গথিক মিনার

নতর-দামের বিখ্যাত মিনারটি সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের সময় ভেঙ্গে পড়েছে। ১২শ শতাব্দিতে এই মিনারটি তৈরি করা হয়েছিল।

এই গির্জাটির সাড়ে আটশ বছরের ইতিহাসে এই মিনারটিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ফরাসি বিপ্লবের সময় মিনারটিকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। পরে ১৮৬০ সালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।

রেলিকস

নতর-দামে বেশ কিছু পুরনো নিদর্শন ছিল, এরমধ্যে ‘প্যাসন অব ক্রাইস্ট’, একটি ক্রসের অংশ, একটি নেইল এবং ‘হলি ক্রাউন অব থর্নস’ অন্যতম।

আগুন থেকে এই ক্রাউন অব থর্নস বা কণ্টক মুকুটটিকে রক্ষা করা গেছে বলে জানা গেছে।