বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে হিমালয়ের হিমবাহ

জলবায়ুর পরিবর্তন হিন্দুকুশ ও হিমালয় পর্বতমালার হিমবাহগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে উঠছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2019, 09:38 AM
Updated : 5 Feb 2019, 09:38 AM

কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় না কমালে বিশাল বিশাল এসব হিমবাহের দুই-তৃতীয়াংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে প্রতিবেদনটিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

চলতি শতকেই গড় তাপমাত্রার পরিমাণ যদি এখনকার চেয়ে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বাড়ে তাহলেও বরফের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হয়ে যাবে, প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছে বিবিসি।

হিন্দুকুশ ও হিমালয়ের ওই হিমবাহগুলো সংলগ্ন অন্তত ৮টি দেশের সুপেয় পানির অন্যতম প্রধান উৎস। কে-টু ও এভারেস্টের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গধারী এ দুটি পর্বতমালার মধ্যেই মেরু অঞ্চলের পর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বরফ জমা আছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণে সেখানকার হিমবাহগুলো এক শতকেরও কম সময়ের মধ্যে শুষ্ক পাথরের খাতে পরিণত হতে পারে বলে শঙ্কা বিজ্ঞানীদের।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে সৃষ্ট বায়ুদুষণ ও বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই ওই পর্বমতামালার বরফ গলার হার বাড়তে পারে বলেও ধারণা তাদের।

ভারত ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, বাংলাদেশ ও নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের সমভূমি নিয়ে গঠিত ইন্দো-গঙ্গা সমভূমির জনবহুল এলাকা থেকে দূষিত বায়ু বরফের গায়ে ধুলা ও কালো কার্বনের আস্তর সৃষ্টি করে; এটি বরফের জমাট গঠনকে ভেঙে ফেলে হিমবাহের পরিস্থিতিকে শোচনীয় করে তোলে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখনকার গড় তাপমাত্রার চেয়ে মাত্র ২ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তাহলে ২১০০ সালের মধ্যেই অর্ধেক হিমবাহ হারিয়ে যাবে। আর যদি বিশ্ব নেতারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর নাটকীয় কোনো পদক্ষেপ কার্যকর করতে পারেন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি এ শতকের শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সীমা দেড় ডিগ্রির মধ্যেই থাকে, তবুও অন্তত ৩৬ শতাংশ হিমবাহ একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। 

“এটাই জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট, যা আপনারা শোনেওনি। এরইমধ্যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে পলকা ও বিপদপ্রবণ পর্বতমালায় পরিণত হয়েছে, যার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজনকে ভয়াবহ বায়ু দূষণ থেকে শুরু করে আবহাওয়ার চরম সব প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে।

“বর্ষাপূর্ব সময়ে এখানকার নদীর প্রবাহ কমে এসেছে, বর্ষাকালে যে পরিবর্তন দেখা দেবে তা আঘাত করবে সবচেয়ে ভয়াবহভাবে। শহুরে পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বিপদে ফেলবে,” বলেছেন গবেষণা প্রতিবেদনটির নেতৃত্ব দেওয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) ফিলিপাস ওয়েস্টের। 

হিমবাহের প্রবাহে পরিবর্তন এলে তা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের প্রায় তিনহাজার কিলোমিটার এলাকার প্রাণ-প্রকৃতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

হিন্দুকুশ ও হিমালয় পর্বতমালার এ হিমবাহ গঙ্গা, সিন্ধু, ইয়েলো, মেকং ও ইরাবতীর মতো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নদী ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রেখেছে। এসব নদীর ওপর কয়েকশ কোটি লোকের খাদ্য, জ্বালানি,  বিশুদ্ধ বাতাস ও আয় নির্ভর করে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

জলবায়ুর পরিবর্তন কেবল পর্বতমালাগুলোর বাসিন্দাদের ওপরই আঘাত হানবে না, নদী উপত্যাকা ও এর আশপাশের ১৬৫ কোটি বাসিন্দাকে বন্যার ঝুঁকি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করবে বলেও উদ্বেগ বিজ্ঞানীদের।