২০১৮ সালের আলোচিতদের মধ্যে যেমন রয়েছেন সৌদি আরবের নিহত সাংবাদিক জামাল খাশুগজি, তেমনি রয়েছেন মিয়ানমারে দণ্ডিত রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোক ও কিয়াও মো ওকে।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও স্থান পেয়েছেন টাইমের চোখে আলোচিত এই সাংবাদিক দলের মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সাপ্তাহিক প্রতি বছরের শেষে আলোচিত ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করে থাকে, যাকে বলা হয় ‘দ্য পারসন অব দ্য ইয়ার’।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহসী ভূমিকা রেখেছেন যে নারীরা, ২০১৭ সালে সেরা আলোচিত ছিলেন তারা।
এবারও একক কোনো ব্যক্তি নয়, একটি গোষ্ঠীকে বেছে নিয়েছেন প্রভাবশালী পত্রিকাটির সম্পাদকরা। এই সাংবাদিকদের টাইম অভিহিত করেছে ‘দ্য গার্ডিয়ানস’ হিসেবে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এবারের সংখ্যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সত্যের লড়াই’।
এই ‘গার্ডিয়ানদের’ প্রধান তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে হত্যাকাণ্ডের শিকার খাশুগজি ওয়াশিংটন পোস্টের প্রদায়ক ছিলেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক এই সাংবাদিক হত্যার পেছনে যুবরাজের হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়।
গত অক্টোবরে খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের পর এখনও তিনি সংবাদের শিরোনাম। আর টাইমের ইতিহাসে এবারই প্রয়াত কোনো ব্যক্তি ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে নির্বাচিতদের মধ্যে এলেন।
মিয়ানমারের দুই সাংবাদিক ওয়া লোক ও কিয়াও মো ওকে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনা প্রমাণসহ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে এনেছিলেন। তারপর তাদের বন্দি করা হয়। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল গেজেট‘র সাংবাদিকদের আলোচিতদের মধ্যে এনেছে টাইম, গত জুনে তাদের কার্যালয়ে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন পাঁচজন সহকর্মী।
বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গত অগাস্টে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শহিদুল আলম। তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়।
শহিদুলের মুক্তির দাবিতে দেশে নানা কর্মসূচি পালিত হওয়ার পাশাপাশি অমর্ত্য সেনসহ নোবেলজয়ী অনেকে বিবৃতি দেন।
শহিদুল সরকারের দমন-পীড়নের শিকার বলে তার পক্ষের সবাই বলে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অপরাধ করলে কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পায় না। তিন মাস কারাগারে থাকার পর গত মাসে জামিনে মুক্তি পান আলোকচিত্রী শহিদুল।
ফিলিপিন্সের নিউজ পোর্টাল র্যাপলার’র নির্বাহী প্রধান মারিয়া রেসা রয়েছেন এই ‘গার্ডিয়ান’দের মধ্যে। গত মাসে কর ফাঁকির মামলায় অভিযুক্ত এই নারী দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের আক্রোশের শিকার বলে মনে করা হয়।
‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মারিয়া রেসা সিএনএনকে বলেন, সাংবাদিক হওয়ার জন্য এখন সময়টা বড়ই কঠিন। তবে আমাদের শক্তির জায়গা এটাই যে সাংবাদিক হওয়ার জন্য সহজ সময় আসলে কখনও আসে না।”
টাইমের প্রধান সম্পাদক এডওয়ার্ড ফেলসেনথল এবারের আলোচিত নির্বাচনের বিষয়ে লিখেছেন, সত্য প্রকাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, মুক্তমত প্রকাশের জন্য নির্ভিকভাবে সরব থেকে এই ‘গার্ডিয়ান’রা এবারের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’।
“পছন্দের এই ব্যক্তিদের দিকে তাকালে স্পষ্ট দেখা যাবে যে সত্য চাপিয়ে রাখা পুরো বছরই নিয়মিত ঘটনা হয়ে থেকেছে,” বলেন তিনি।
এবার টাইমের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হতে গিয়ে এক ধাপ পেছনে আটকে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সহযোগী রবার্ট মুলার।