খাশুগজি সংকট মোকাবেলায় মাঠে সৌদি বাদশাহ সালমান

সাংবাদিক জামাল খাশুগজির অন্তর্ধানের পর থেকে বিশ্বব্যাপী সংকট এতটাই ঘোরতর হয়ে উঠছে যে শেষ পর্যন্ত তা সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে স্বয়ং সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদকে।

>>রয়টার্স
Published : 19 Oct 2018, 06:14 PM
Updated : 20 Oct 2018, 04:15 AM

ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যোগ্য হাতে শাসন করতে পারছেন কিনা তাও এখন খতিয়ে দখতে হচ্ছে তাকে।

সংকট সামলাতে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন বাদশাহ। গত ১১ অক্টোবরে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যক্তিগত উপদেষ্টা প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সালকে ইস্তাম্বুলে পাঠান তিনি।

খালেদের সফরকালে খাসোগির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে তুরস্কের সঙ্গে একটি যৌথ টীম গঠনে একমত হয় সৌদি আরব। এরপর থেকেই বাদশাহ সালমান নিজ হাতেই বিষয়টি সামলাচ্ছেন। এমনটিই বলছেন সৌদি রাজপরিবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা অবশ্য এ ব্যাপারে সরাসরি বাদশাহের জড়িত থাকার বিষয়টি এখনো বলছেন না। আর বাদশাহেরও এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা ছিল না। কারণ, তিনি তো তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকেই সবকিছু দেখাশুনার ভার দিয়ে দিয়েছিলেন।

খাশুগজিকে নিয়ে সংকটের বিষয়টিও তার জানা ছিল না বললেই চলে। কারণ, ক্রাউন প্রিন্সের সহযোগীরা বাদশাহকে কেবল দেশের গৌরবজ্জ্বল সংবাদগুলোই সবসময় দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু খাশুগজির ঘটনাটি বহুদূর গড়ানোয় তা আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি তারা।

গত ২ অক্টোবরে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজি তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর থেকে আর তাকে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সব আরব এবং সৌদি টিভি চ্যানেলেই সে খবর আসে। আর তখনই বাদশাহ সব জানতে পারেন। ক্রাউন প্রিন্স তখন এ বিশ্ব সংকট সামাল দিতে বাদশাহকে অনুরোধ জানান।

ক্রাউন প্রিন্স তখতে বসার পর থেকেই তার হাতে অনেক ক্ষমতা দিয়েছিলেন বদশাহ। কিন্তু এখন বাদশাহর হস্তক্ষেপে প্রিন্স সালমানের শাসন করার যোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে। প্রিন্সের সুনামও এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

সৌদি রাজদরবার সংশ্লিষ্টরা অনেকেই এখন বলছেন, “বাদশাহর কাছে তার ছেলে প্রিয় হলেও তাকে এখন শুধু ছেলেকে বাঁচানো নয় বরং সামগ্রিকভাবে নিজের এবং রাজপরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার কথা ভেবে কাজ করতে হবে।”

হিসাব-নিকাশে ভুল করে ফেলেছিলেন যুবরাজ

খাশুগজি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তুরস্ক তিনি খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ করলেও সৌদি আরব বরাবরই কোনো কিছু জানা থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।

কিন্তু সৌদি আরবের বহু দিনের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানোর পর ঘটনাটি দেখভালের জন্য মাঠে নামেন বাদশাহ সালমান।

অর্থাৎ, ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সুর চড়াল, আর তারপরই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বাদশাহকে জানালেন, একটি সমস্যা হয়েছে এবং তা মোকাবেলা করতে হবে।

এর আগে ক্রাউন প্রিন্স ও তার সহযোগীরা প্রাথমিকভাবে ধরে নিয়েছিলেন সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু ঘটনাটির পরিণতি যে কি হতে পারে সে হিসাবে ভুল করে ফেলেছিলেন তারা।

বাগে আসছে বেসামাল পরিস্থিতি

বাদশাহ সালমান হস্তক্ষেপের আগে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলে যাচ্ছিল সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। হুমকির সুরে তারা বলছিল, খাশুগজি নিখোঁজের জেরে কেউ সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এর আরো বড় পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।

এতে করে বিশ্বে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাসহ তেলের দামও একলাফে বেড়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল সৌদি আরবের সরকারি মালিকানাধীন পত্রিকায়।

গত ২৪ ঘণ্টায়ও সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হুমকির প্রতিক্রিয়াই এসেছে ক্রাউন প্রিন্সের কাছ থেকে। কিন্তু বাদশাহ সালমান এখন ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। অনেকটাই ভিন্ন সুরে কথা বলছেন তিনি, জানান রাজপরিবার সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী।

বাদশাহ সম্প্রতি কয়েকদিনে সরাসরি কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গেও।

৮২ বছর বয়সের বাদশাহ সালমান দীর্ঘদিন ঐকমত্যের ভিত্তিতে শাসন পরিচালনা করেছেন। চার দশক ধরে রিয়াদের গভর্নর হিসাবে তিনি তার রাজ ক্ষমতাবলে বিপথে চলে যাওয়া প্রিন্সদের সাজা দিয়ে সুনামও কুড়িয়েছেন।

এখনকার এ সংকটে তিনি আবার সেই ভূমিকায় ফিরে যাবেন কি-না সেটিই এখন দেখার বিষয়।