‘মার্কিন সেনাদের দেহাবশেষ শিগগিরই ফেরত দিতে পারে উ. কোরিয়া’

কোরীয় যুদ্ধের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নিখোঁজ যে সেনা সদস্যদের দেহাবশেষ পিয়ংইয়ংয়ের কাছে আছে, তাদের হস্তান্তরে কয়েকদিনের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2018, 07:34 AM
Updated : 21 June 2018, 06:52 AM

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, উত্তর কোরিয়া তাদের কাছে থাকা সৈন্যদের মরদেহের যে অংশবিশেষ এখনো আছে তা দক্ষিণ কোরিয়ার জাতিসংঘ কমান্ডের কাছে হস্তান্তর করতে পারে; পরে সেখান থেকে সেগুলো হাওয়াইয়ের হিকাম বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।

কর্মকর্তাদের একজন ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে বলে আশা প্রকাশ করলেও ‘অনুমান করা যায় না এমন আচরণের কারণে’ উত্তরের শীর্ষ নেতা কিম জং উন ঠিক কতগুলো ফেরত দিতে চেয়েছেন তা জানাননি।

শেষ পর্যন্ত কতজনের দেহাবশেষ ফেরত পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত হতে কয়েক মাস এমনকী বছর গড়িয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা তাদের।

সপ্তাহখানেক আগে সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিমের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোরীয় যুদ্ধে নিখোঁজ সেনা সদস্যদের দেহাবশেষ ফেরত দিতে পিয়ংইয়ংয়ের রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

“পরিবারগুলো তাদের বাবা-মায়েদের ফিরে পেতে চায়; ফিরে পেতে চায় সবাইকে যারা বর্বর ওই যুদ্ধের শিকার হয়েছিল। তিনি (কিম) যথাযথভাবে দ্রুততার সঙ্গে তাদের ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। এটি যে চমৎকার একটি বিষয়, তা তিনি (কিম) বুঝতে পেছেন,” সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এমনটাই বলেছিলেন।

১৯৫০-৫৩ পর্যন্ত চলা কোরীয় যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর প্রায় ৭ হাজার সাতশ সদস্য নিখোঁজ হয়েছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়া তাদের কাছে দুইশর মতো সেনা সদস্যের দেহাবশেষ আছে বলে পেন্টাগনকে ইঙ্গিত দিয়েছিল। চার বছরের ওই যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর সাড়ে ৩৬ হাজারের বেশি সৈন্য মারা পড়েছিল।

২০০৭ সালে সর্বশেষ নিউমেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের তৎকালীন গভর্নর বিল রিচার্ডসনের পিয়ংইয়ং সফরের সময় কোরীয় যুদ্ধে নিহত কিছু মার্কিন সৈন্যের দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ সম্মেলনকে ট্রাম্প ‘বিরাট সাফল্য’ হিসেবে দেখলেও ওই বৈঠক থেকে আদতেই নতুন কিছু অর্জিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা।

একতরফাভাবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে অসম্মত হওয়ায় সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে নতুন কোনো প্রতিশ্রুতিও আসেনি, মন্তব্য তাদের।

তবে পিয়ংইয়ং যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, অবশিষ্ট মার্কিন সেনাদের ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া তার জানান দিতে পারে বলে ধারণা করছে রয়টার্স।

সিঙ্গাপুরে শীর্ষ বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা অগাস্টে নির্ধারিত মহড়াটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি পূরণে ‘যেন বেশি দেরি না হয়’ তা নিশ্চিত করতে ফের উত্তর কোরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও।

চলতি বছরই দু’বার দেশটিতে যাওয়া সিআইএর এ সাবেক প্রধানের সঙ্গে সিঙ্গাপুরেই তৃতীয় দফা দেখা হয়েছিল কিম জং উনের।

“কিম তার দেশের সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদিও তা অর্জনে এখনো অনেক কাজ বাকি,” ডেট্রয়টে দেওয়া এক বক্তৃতায় এমনটাই বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।