কিমের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে ‘বেরিয়ে আসবেন’ ট্রাম্প

উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে প্রস্তাবিত আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে সেখান থেকে ‘বেরিয়ে আসবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2018, 06:40 AM
Updated : 19 April 2018, 06:40 AM

জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক পথ থেকে ফেরাতে দেশটির ওপর সর্বোচ্চ চাপ অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন।

এর আগে ফ্লোরিডার অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-আ-লগোতে আবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়া, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তিসহ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন বলে খবর বিবিসির।

কিমের সঙ্গে বৈঠক করতে সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পেওর উত্তর কোরিয়া সফরের বিষয়টিও নিশ্চিত করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, কিম ও পম্পেওর মধ্যে ‘সুসম্পর্ক স্থাপিত’ হয়েছে; গোপন ওই বৈঠকটি ‘সাবলীলভাবে সম্পন্ন’ হয়েছে বলেও মত তার।

হবু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এ পিয়ংইয়ং সফরকে দেড় যুগ পর যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরাও।

মার্চের শেষ সপ্তাহে হওয়া বৈঠকটিতে কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের আসন্ন বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর। জুনের ওই বৈঠকের স্থান এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

আবের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, সফল হবে না মনে হলে তিনি কিমের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহই দেখাতেন না। বৈঠক চলাকালীন সময়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না মনে হলে ততক্ষণাৎ বেরিয়ে আসার কথাও বলেন তিনি।

“যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার অপারমাণবিকীকরণ সম্পন্ন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সর্বোচ্চ চাপ অব্যাহত রাখবো।”

পারমাণবিক সমৃদ্ধির পথ ত্যাগ করলে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ অপেক্ষা করছে বলেও মন্তব্য করেন এ রিপাবলিকান।

আবের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প দু্‌ই দেশের মধ্যে ‘অবাধ, ন্যায্য ও পারস্পরিক’ বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও কথা বলেন।

ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তিতে ফেরার ব্যাপারে আপত্তি বিদ্যমান থাকলেও জাপানসহ অন্যান্য পক্ষ যদি ‘এমন কোনো প্রস্তাব দেয়, যা প্রত্যাখ্যান করতে পারবো না’ তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি নিয়ে ভেবে দেখবে বলেও জানান এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

অন্যান্য মিত্রদের সুবিথা দিলেও আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর গত মাসে ট্রাম্প যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তা থেকে টোকিওর অব্যাহতি মেলেনি।

কিমের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প যেন ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার হাতে অপহৃত জাপানি নাগরিকদের মুক্তির ব্যাপারে দেনদরবার করেন সে ব্যাপারে অনুরোধ করার কথা জানান আবে। 

কোরীয় গুপ্তচরদের জাপানি কেতা শেখাতে ১৩ জাপানি নাগরিককে অপহরণের কথা স্বীকার করেছে পিয়ংইয়ং; এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি টোকিওর।

উত্তর কোরিয়ার হাতে তিন মার্কিন নাগরিকও বন্দি। ট্রাম্প জানান, অপহৃত ও বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

ফেব্রুয়ারিতে পিয়ংচ্যাংয়ে হওয়া শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সম্পর্কের বরফ কমে আসার ধারাবাহিকতাতেই ওয়াশিংটনকে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

প্রস্তাব গ্রহণ করে ট্রাম্প জুনের প্রথম দিকে কিংবা তারও আগে উত্তরের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। বৈঠকস্থল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বেশ কয়েকটি স্থানকে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও পরে জানিয়েছেন তিনি।

গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়ার পরই পম্পেও গোপনে পিয়ংইয়ং রওনা হন বলে মার্কিন প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।

ট্রাস্পের ‘সবুজ সংকেত’ পেলেও মন্ত্রী হতে সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে পম্পেওকে। সমকামী বিয়ের বিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে খ্যাত সিআইএ পরিচালকের জন্য ডেমোক্রেট সিনেটররা সে পথ কঠিন করে তুলতে পারেন বলেও ধারণা অনেকের।