‘অজানাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস যুগিয়েছেন হকিং’

মহাকাশচারী থেকে রাজনৈতিক নেতা, সহকর্মী, বিজ্ঞানী, সাধারণ মানুষ; ৭৬ বছর বয়সী কিংবদন্তি স্টিভেন হকিংয়ের শোকে স্তব্ধ সারাবিশ্ব।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2018, 11:02 AM
Updated : 14 March 2018, 11:02 AM

সৃষ্টিতত্ত্ব ও কৃষ্ণগহবরের গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণার এ দিকপাল বুধবার ক্যামব্রিজের নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে হকিং স্মরণ ট্রেন্ড হয়ে ওঠে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। টুইটার, ফেইসবুক ছেয়ে যায় কিংবদন্তিকে জানানো বিদায় বার্তায়।

ব্রিটিশ এই পদার্থবিদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত অপেক্ষবাদ ও ব্ল্যাক হোল নিয়ে তার তত্ত্বের জন্য। ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ এর মত বই লিখে তিনি বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কেও সাধারণ মানুষের অনেক কাছাকাছি নিয়ে গেছেন।

২২ বছর বয়সে বিরল প্রকৃতির মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে হুইলচেয়ারে চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে বিরল প্রতিভাধর এ বিজ্ঞানীর; কথা বলতেন বিশেষভাবে তৈরি করা কম্পিউটার সিস্টেমে। এসবের কোনোকিছুই সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে তার গবেষণায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি।  

হকিং এভাবেই কয়েক প্রজন্মকে ‘নীল গ্রহের বাইরে তাকাতে উৎসাহিত করেছেন, মহাকাশ বিষয়ে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও বিস্তৃত করেছেন’, মন্তব্য ২০১৬ সালে ছয় মাস মহাশূন্যে কাটিয়ে আসা নভোচারী টিম পিকের।

 

নাসার টুইটে স্মরণ করা হয়েছে হকিংয়ের মহাকাশ সংক্রান্ত উদ্ভাবনী দিকগুলোকে।

“তার তত্ত্বগুলো মহাবিশ্বের নানান সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছিল; আমরা এবং সমগ্র বিশ্ব যেগুলোর অন্বেষণ করছে। হয়তো আপনি (হকিং) এখন মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে সুপারম্যানের মত উড়ে বেড়াচ্ছেন।”

 

শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বলেছেন, হকিংয়ের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও জেদ সারাবিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

 

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক স্মরণ করেছেন বিরল মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও কিংবদন্তি পদার্থবিদের হার না মানা মানসিকতাকে।

 

নক্ষত্রের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। বলেছেন, তার প্রজন্মের সেরা বিজ্ঞানী ছিলেন হকিং।

 

লেবার নেতা জেরমি করবিন বলেছেন, হকিং সমগ্র বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

 

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রী জেরমি হান্টের কট্টর সমালোচক ছিলেন হকিং; বিভিন্ন নীতিতে প্রায়ই তার সঙ্গে জড়িয়েছেন বিতর্কে। বুধবার হান্টের কণ্ঠেও ছিল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

 

শ্যাডো চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেল স্মরণ করেছেন হকিংয়ের রসবোধকে।

“তাকে হারানো দুঃখের, কিন্তু তার অসাধারণ সব স্মৃতি আমাদের সঙ্গে আছে.” আইটিভির গুড মর্নিং ব্রিটেনকে বলেন ম্যাকডোনেল।

ব্রিটিশ পদার্থবিদের ‘সেন্স অব হিউমার’ এর কথা মনে করেছেন জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপক ল্যারি কিংয়ের কথাতেও।

 
 

স্টিভেন হকিংয়ের প্রয়াণে প্রথম যারা শোক প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক স্যার টিম বার্নার্স লি।

“আমরা এক বিশাল হৃদয় আর বিস্ময়কর আত্মাকে হারিয়েছি। শান্তিতে ঘুমান স্টিভেন হকিং।”

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্টিভেন টোপ বলেছেন, বিজ্ঞান ও গণিতে হকিংয়ের অবদান অবিস্মরণীয় কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে থাকবে।

প্ল্যানেটারি সোসাইটি ‘সুন্দর মনের মানুষ’টিকে বিদায় জানিয়েছে; জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী নিল ডেগ্রেস টাইসন বলেছেন, হকিংয়ের মৃত্যু বৃদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে শূন্যতার সূচনা করবে।

 

টুইটারে শোক জানিয়েছেন স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্ট্রুজেন।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সাত্যিয়া নাদেলা বলেছেন, “আমরা মহান একজনকে হারালাম। বিজ্ঞানে অবিশ্বাস্য অবদান আর জটিল তত্ত্ব আর ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

“অসম্ভব যেসব বাধার মুখে তিনি পরেছেন, তারপরও মহাবিশ্ব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জনে তার উদ্দীপনা আর সীমাহীন সাধনার জন্যও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

অধ্যাপক জেমস হার্টল, পদার্ধবিদ ব্রায়ান কক্সের মত অনেক বিজ্ঞানী বছরের পর বছর ধরে হকিংয়ের সঙ্গে তাদের গবেষণা সংক্রান্ত বাদানুবাদের কথা স্মরণ করেছেন; মনে করেছেন, হকিং কিভাবে তাদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন। 

হার্ভার্ডের জ্যোতিঃপদার্থবিদ জনাথন ম্যাকডোনাল্ডের স্মৃতিতে ভাসছে কথা বলার সীমাবদ্ধতা সত্বেও বক্তৃতা দিতে হকিংয়ের দৃঢ় সংকল্পের কথা।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাউন্ট স্ট্রোমোলো অবজারভেটরির গবেষক ব্র্যাড টাকারের মতে, হকিং কেবল সৃষ্টিতত্ত্ব আর জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের নেতা ছিলেন না, অজানাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস যুগিয়েছেন।

মহাবিশ্বে মানুষের অবস্থান কিরকম, তা বুঝতে সাহায্য করায় হকিংকে ধন্যবাদ দিয়েছে গ্রিনপিস ইউএসএ। তিনি আমাদের ‘ভয় ও বিস্ময়ের মধ্যে ছেড়ে গেছেন’, বলেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক শন ক্যারল কিংবদন্তি হকিংকে ‘উদ্দীপক ব্যক্তি’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন নভোচারী ক্রিস হ্যাডফিল্ড বলেছেন, “প্রতিভাবানরা বিরল, বিদায় অধ্যাপক হকিং।”

 

শোক বার্তা এসেছে বিনোদন জগত থেকেও।

১৯৯১ সালে হকিংয়ের লেখা এ ব্রিফ হিস্টরি অব টাইমের আদলে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করা এরল মরিস টুইট করেছেন হকিংকে ‘সত্যিকারের অসাধারণ মানুষ’ অ্যাখ্যা দিয়ে।

ফো ফাইটারস তাকে বলছে ‘ফাকিং লিজেন্ড’; অভিনেতা ম্যাককলয় কুলকিন বিদায় জানিয়েছেন ‘প্রতিভাবান ও আমার প্রিয় সিম্পসন চরিত্রকে’।

 
 

জনপ্রিয় গায়িকা কেটি পেরি হকিংয়ের মৃত্যুতে দেখছেন সংখ্যাতত্ত্বের লীলা। পাই দিবস হিসেবে খ্যাত আইনস্টাইনের জন্মদিনে একবিংশ শতাব্দীর সেরা এ গণিতবিদের মৃত্যুকে কাকতালীয় অভিহিত করে বলেছেন, “(এ সংবাদ) আমার হৃদয়ে বিশাল এক কৃষ্ণ গহ্বর সৃষ্টি করল।”

অ্যারোস্মিথ ব্যান্ডের স্টিভেন টেইলরের টুইট, “আপনি বিশ্বকে বদলে দিয়েছেন।”

ব্রিটিশ উপস্থাপক জনাথন রসের মতে, হকিংয়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বুদ্ধিমত্তাও অনেকখানি কমে গেল।

মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় হকিং ট্রেন্ড। অসংখ্য ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে ঘুরতে থাকে হকিং আর তার হুইল চেয়ারের প্রতিকৃতি; যেখানে বসে কিংবদন্তি এ কসমোলজিস্ট আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব আর দর্শন দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা হাজারো ভ্রান্ত ধারণা।