সিরিয়া যুদ্ধ: নিরাপত্তা পরিষদে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির অনুমোদন

ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো এবং অসুস্থ ও আহতদের সরিয়ে নিতে সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2018, 08:11 AM
Updated : 25 Feb 2018, 08:11 AM

শনিবার পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয় বলে খবর বিবিসির।

প্রস্তাবের আওতায় ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ও তাদের সিরীয় সহযোগীদের না রাখায় যুদ্ধবিরতি কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা সন্দেহ পোষণ করছেন।

গত রোববার থেকে রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী বিদ্রোহীদের শক্তিশালী ঘাঁটি পূর্ব গৌতায় সরকারি বাহিনীর ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ চলছে; নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের পরও ওই এলাকায় বিমান হামলা অব্যাহত ছিল বলে সেখানে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন।

বিবিসি বলছে, পূর্ব গৌতায় যুদ্ধবিরতির জন্য বৃহস্পতিবার থেকে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব আনার চেষ্টা চললেও বিশ্বশক্তিগুলো একমত না হওয়ায় দেরি হচ্ছিল।

সিরীয় সরকারের মিত্র রাশিয়া এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাবে পরিবর্তন আনার কথা বললে পশ্চিমা কূটনীতিকরা একে মস্কোর সময়ক্ষেপণের চেষ্টা অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করছিল।

শনিবারের প্রস্তাবের প্রাথমিক খসড়ায় কেবল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল- কায়েদা ও নুসরা ফ্রন্টকে যুদ্ধবিরতির বাইরে রাখার কথা বলা হলেও রাশিয়া এর সঙ্গে জঙ্গিদের ‘সহায়ক গোষ্ঠীগুলোকেও’ অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায়।

পরে চূড়ান্ত প্রস্তাবে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সহযোগী ‘ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ’কে সুনির্দিষ্ট করে এসবের ওপর হামলাকেও যুদ্ধবিরতির আওতার বাইরে রাখা হয়।

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদিত প্রস্তাবটি দ্রুত কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন; আসাদবাহিনী এ প্রস্তাব মানবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের কথাও জানান তিনি।

‘মধ্যস্থতা দীর্ঘায়িত’ করার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন এ মার্কিন কূটনীতিক।

এ বিষয়ে হ্যালি বলেছেন, “প্রস্তাব অনুমোদনে তিন দিন লেগেছে, এর মধ্যেই বোমা ও গুলিবর্ষণে অনেক মা তার সন্তানকে হারিয়েছেন।”

জাতিসংঘে ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঙ্কো দেলাত্রেও সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি থামাকে ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের ব্যর্থতারও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভেসিলি নেবেনজিয়া বলছেন, যুদ্ধে নিয়োজিত সবপক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্ব গৌতার পরিস্থিতি নিয়ে অতিরঞ্জনেরও প্রতিবাদ জানান তিনি।

“সিরিয়ার মানবিক পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা আমরা জানি। সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার; তবে কেবল পূর্ব গৌতাই নয় পুরো সিরিয়াতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন নেবেনজিয়া।

সপ্তাহখানেক ধরে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি পূর্ব গৌতায় সরকারি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৫০০ লোক নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে; একই সময়ে দামেস্কে বিদ্রোহীদের গোলাবর্ষণে ১৬ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

শনিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস পূর্ব গৌতায় ২৯ বেসামরিকের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যাদের ১৭ জনই ওই এলাকার প্রধান শহর দুমাতে নিহত হন।

রাশিয়া ও সিরিয়ার বিমান এলাকাটিতে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালাচ্ছে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। মস্কো পূর্ব গৌতা অভিযানে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

পূর্ব গৌতা এলাকাটিতে চার লাখের মত মানুষ আটকে আছে এবং সেখানে ব্যারেল বোমা ও গোলা পড়ছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

জাতিসংঘের মহাসচির আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, সিরিয়ার পূর্ব গৌতা ‘পৃথিবীর নরকে’ পরিণত হয়েছে। 

হামলা শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকটি হাসপাতালও অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

সিরিয়ার সরকারি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের লক্ষ্য কেবল ‘সন্ত্রাসীরা’।

ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর পাশাপাশি সিরিয়ার মূল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকেও আসাদবাহিনী ‘সন্ত্রাসী’ বলে থাকে।

পূর্ব গৌতায় সক্রিয় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে আছে জইশ আল-ইসলাম ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ফায়লাক আল-রাহমান। শেষোক্ত গোষ্ঠীটি আগে জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামসের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছিল।

আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ সিরীয় জঙ্গিগোষ্ঠী নুসরা ফ্রন্ট গত বছর তাদের নাম বদলে হায়াত তাহরির আল-শামস রেখেছে।

সিরিয়ার সরকার বলছে, হায়াত তাহরির আল-শামসের উপস্থিতির কারণেই পূর্ব গৌতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।