জুমাকে সরে দাঁড়াতে বলল এএনসি

দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মুখে প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিতে জ্যাকব জুমাকে আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2018, 10:11 AM
Updated : 13 Feb 2018, 06:02 PM

দলের শীর্ষ পর্যায়ে একজন নেতা একথা জানিয়েছেন। এতে করে পদত্যাগের জন্য জুমার ওপর চাপ আরো বাড়ল।

জুমা এর আগে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় এএনসির নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা এক ম্যারাথন বৈঠকের পর তাকে জরুরি ভিত্তিতে পদত্যাগ করতে বলার সিদ্ধান্ত নেন।

জুমা এখন পার্টির দাবি মেনে পদত্যাগ করবেন নাকি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকবেন এবং পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হবেন সে বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এএনসির মহাসচিব এইস মাগাশুলে অবশ্য মঙ্গলবার জোহানেসবার্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ৭৫ বছর বয়সী জুমা পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন। তবে আগামী তিন থেকে ছয়মাসের একটি ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ মঞ্জুর করা হলেই কেবল সেটি করতে চান তিনি।

কিন্তু এএনসি জুমার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রেসিডেন্টের অবস্থান এখন কী তা স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে সিএনএন।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসার পর থেকে দুর্নীতির নানান অভিযোগ পাশ কাটিয়ে আসছিলেন এএনসির সাবেক শীর্ষ নেতা জুমা।

গত ডিসেম্বর থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ বাড়তে থাকলেও তা প্রতিহত করে এসেছেন তিনি। ওই মাসেই এএনসির নেতা হিসাবে তার স্থলাভিষিক্ত হন সিরিল রামাপোসা।

এএনসির মহাসচিব এইস মাগাশুলে সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির (এনইসি) সদস্যরা জরুরি ভিত্তিতেই জুমাকে অপসারণ করা উচিত বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে রামাপোসাকে চাই।”

সাংবাদিকদের মাগাশুলে বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন নেওয়া হয়ে গেছে”, তারপরও জুমা তাকে বলেছেন, এএনসির নির্বাহী কমিটির এরকম একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার আছে বলে তিনি মনে করেন না।

জুমাকে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না হলেও বুধবারই তিনি এনইসির সিদ্ধান্তে সাড়া দেবেন- এমনটিই আশা করেন বলে জানিয়েছেন মাগাশুলে।

দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যমগুলো প্রেসিডেন্ট জুমার আসন্ন পদত্যাগকে ‘জেক্সিট’ বলা শুরু করেছে।

সংবাদদাতারা বলছেন, দল থেকে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক দাবি প্রতিহত করা জুমার জন্য কঠিন হবে। তারপরও জুমা দলের এ ডাকে আইনগতভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য না হওয়ার কারণে কৌশলগতভাবে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবেন। যদিও দলের সমর্থন তার থাকবে না।

তখন তাকে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মুখে পড়তে হবে। ২২ ফেব্রয়ারিতে এ ভোট হওয়ার কথা আছে। তবে তা হতে পারে এর আগেও।

ইতোপূর্বে এ ধরনের আস্থা ভোটে জুমা বেশ কয়েকবার উৎরে গেলেও এবার সে সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। আস্থা ভোটে পরাজিত হলে জুমা এবং তার দলের জন্য তা অমর্যাদার হবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।

২০০৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি তার ডেপুটি জুমার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জেরে পদত্যাগ করলে পরের বছরই জুমা দল ও রাষ্ট্রের হাল ধরেন।

এএনসি ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার হাত ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ২০১৬ সালের স্থানীয় নির্বাচনেই সবচেয়ে কম ভোট পায় দলটি; আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে তারা এরই মধ্যে তাদের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদল এনেছে।

দুই দফা প্রেসিডেন্ট পদে থাকায় সাংবিধানিকভাবে জুমার ফিরে আসার কোনো পথ খোলা নেই। গত এক দশকজুড়ে জুমাকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা নানান দুর্নীতির অভিযোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। জুমা বরাবরই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হওয়া অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থতার দায়ে ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ আদালত জুমার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। গত বছর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৯৯৯ সালে স্বাক্ষরিত এক অস্ত্র চুক্তিতে দুর্নীতি, জালিয়াতি, কালোবাজারি ও মুদ্রা পাচারের ১৮ ধরণের অভিযোগে জুমার বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয়।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনী ব্যবসায়ী গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে জুমার জনপ্রিয়তাতেও ব্যাপক ধস নেমেছে। গুপ্ত পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারের ভেতর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। জুমা এবং গুপ্ত পরিবার উভয়েই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

গত বছরের শেষদিকে এএনসির শীর্ষপদে সিরিল রামাপোসা নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতা থেকে সরে যেতে জুমার ওপর চাপ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।