বিক্ষোভকারীদের চড়া মূল্য দিতে হবে: ইরান

বিক্ষোভকারীরা আইন ভঙ্গ করলে তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে ইরান সরকার।

>>রয়টার্স
Published : 31 Dec 2017, 01:27 PM
Updated : 31 Dec 2017, 01:27 PM

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যমে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দলরেজা রহমানি ফাজলি বলেন, “যারা জনগণের সম্পদ নষ্ট করবে, আইন-শৃঙ্খলা লাঙ্ঘন করবে এবং উত্তেজনা ছড়াবে তারা তাদের কাজের জন্য দায়ী। এজন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।”

“সহিংসতা, ভীতি এবং সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা রুখে দাঁড়ানো হবে” বলে জানান তিনি।

অস্থিরতা বন্ধ না হলে কড়া হাতে বিক্ষোভকারীদেরকে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের রেভল্যুশনারী গার্ডের কমান্ডারও। বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে সহিংসতা ছড়াচ্ছে এবং জনগণের সম্পদ নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

টানা তিনদিন ধরে চলা ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শনিবার আরও নতুন কয়েকটি শহরে ছড়িয়েছে, পাশাপাশি সহিংসতার মাত্রাও বাড়ছে।

এদিন রাজধানী তেহরানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি ব্যাংক ও সরকারি ভবনে ভাংচুর করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।

শনিবার রাতে পশ্চিমের শহর দরুদে দুই বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।

লরেস্তান প্রদেশের গভর্নর হাবিবোল্লাহ খোজাস্তেহপুর তাদের মৃত্যুর জন্য বিদেশি চরদের দায়ী করেছেন।

রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা কোনো গুলি চালায়নি। আমরা এই সংঘর্ষে সরকারের শত্রু, তাকফিরি গ্রুপ এবং বিদেশি চরদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি।”

অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কথিত দুর্নীতির অভিযোগে সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল শহর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ শুরু করেছিল বিক্ষুব্ধরা; পরে তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়ে ক্রমেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আহমাদিনেজাদ বিতর্কিতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। তারপর থেকে এবারের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকেই জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক প্রকাশ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

২০০৯ সালে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওই অস্থিরতা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে দমন করেছিল। নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেও শনিবার ইরানজুড়ে ২০০৯ সালের অস্থিরতা দমন বার্ষিকী সরকারিভাবে পালন করা হয়।

এতে দেশটির শহরগুলোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত মিছিল দেখা যায়।

দেশটির ১,২০০ শহরে সরকারপন্থি মিছিল হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

একই সময় সরকারবিরোধী বিক্ষোভও রাজধানী তেহরানে আরো বিস্তৃত হয়েছে, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে।

তেহরানে প্রথমবারের মতো পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। শহরের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নিয়ে তারা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারে, এর অদূরেই সরকারপন্থি মিছিলকারীরা অবস্থান করছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর দোরুদে সারা শরীরে রক্ত মাখা দুই তরুণকে নিশ্চিলভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নেপথ্য বর্ণনায় ওই দুই তরুণ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ছোড়া দাঙ্গা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের ‘যারা আমার ভাইকে খুন করেছে, আমি তাদের হত্যা করবো!’ শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এই ভিডিওগুলোর সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর আগের ভিডিওগুলোতে দোরুদের মিছিলকারীদের ‘একনায়কের মৃত্যু হোক’ শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশহাদ থেকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গা পুলিশের একটি গাড়ি উল্টে ফেলছে ও পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফারস জানিয়েছে, তেহরানের মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ৭০ জনেরও বেশি ছাত্র পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মেরেছে ও ‘একনায়কের মৃত্যু হোক’ শ্লোগান দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মিছিল করতে থাকা অন্যান্য বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি পেটা করছে দাঙ্গা পুলিশ এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

শিক্ষার্থীদের বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, আরও প্রতিবাদকারীর আগমণ বন্ধ করতে পুলিশ দুটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে।

তেহরানে ও এর পশ্চিমের কারাজে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলোর জানালা ভাংচুর করেছে ও রাস্তায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়েছে।

অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।