চীনে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘লাভ হাসপাতাল’

পরকীয়া সম্পর্কে সংসার ভাঙছে-এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ দিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে চীনে, যা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2017, 07:51 PM
Updated : 21 Dec 2017, 08:21 PM

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে অনাহুতকে তাড়াতে হাজার হাজার ডলার দিচ্ছেন পরিস্থিতির শিকার নারী-পুরুষ। সাংহাইয়ে ‘মিসট্রেস’ তাড়ানোর সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ সুনাম করেছে ওয়েইকিং লাভ হাসপাতাল।

সেখানে মধ্যবয়সী একজন নারীর সঙ্গে কথা হয় বিবিসি প্রতিবেদকের।তিনি জানান, এই সংকট থেকে বেরোনোর পর স্বামীর সঙ্গে এখন তার যে সম্পর্ক হয়েছে, তা আগের চেয়ে বেশি ভালো।

“আমি ভাবতাম, আমাদের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে, কিন্তু এখন অনেক কিছু আমি আরও ভালো অনুভব করছি, এটাই সত্যিকারভাবে বেঁচে থাকা।”

এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কয়েক সপ্তাহ যে পরামর্শ নেন, তার বর্ণনায় যেটা দাঁড়ায় তা হল, তাকে শেখানো হয়েছে কীভাবে আরও ইতিবাচক, আরও দায়িত্বশীল ও ভালো স্ত্রী হয়ে ওঠা যায়।

স্বামীকে পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে ফিরিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক আবারও কীভাবে মধুর করা যায়, সেই গোপন রহস্য নারীদের বাতলে দেন ওয়েইকিংয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মিং লি। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক গভীরে চলে যায় এবং স্বামীর মন বিক্ষিপ্ত হয়।

তাদেরই একজন ওই নারী বলেন, “আমি যখন সম্পর্কের বিষয়টি ধরতে পারলাম, তখন স্বামীর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লাম। আমরা খুব বাজেভাবে ঝগড়া করলাম, আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, এত বছর ধরে আমি তোমার সঙ্গে আছি তারপরেও কেন এমনটা করলে? প্রথম পর্যায়ে সে দোষ স্বীকার করল। কিন্তু ঝগড়াঝাটির পর সে আমার সঙ্গে আর কথা বলতে চাইত না। তখন আমি সহায়তার জন্য এখানে আসি।”

এরপর স্বামীর জীবন থেকে ওই নারীকে তাড়াতে ওয়েইকিংকে টাকা দেন তিনি। এক্ষেত্রে লোক লাগিয়ে ২৪ বছর বয়সী ওই সহকারীকে বোঝানো হয়, দ্বিগুণ বয়সের ওই ব্যক্তির চেয়ে আরও ভালো কাউকে তিনি পেয়ে যাবেন।

এজন্য কয়েক হাজার ডলার খরচ হলেও প্রতারক স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের চেয়ে এটাই ভালো হয়েছে বলে মনে করেন ওই নারী।

তিনি বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে। আমি এসব কিছুকে হারাতে চাই না। আমি কখনও বিচ্ছেদের কথা ভাবিনি।”

১৭ বছর আগে মিং লির সঙ্গে মিলে ‘লাভ হাসপাতাল’ গড়ে তুলেছিলেন শু শিন। এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়েছেন তারা।

শু শিন জানান, ‘মিসট্রেস’ তাড়াতে ৩৩টি কৌশল অবলম্বন করেন তারা।

তিনি বলেন, “বিবাহিত জীবনে সব ধরনের সমস্যা থাকে এবং তার মধ্যে একটি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক। এটা খুবই গুরুতর। পরিবার এবং সমাজের স্থিতিশীলতার জন্যও এটা খারাপ।”

শু শিন তাদের চারটি কৌশলের কথা জানান: ওই নারীকে অন্য কারও প্রেমে ফেলা, স্বামীর বসকে রাজি করিয়ে কর্মস্থল বদল করে তাকে অন্য কোনো জেলায় নিয়োজিত করা, পরিবার ও বন্ধুদের দিয়ে হস্তক্ষেপ করানো এবং স্বামীর বদনাম ও বংশগতভাবে পাওয়া জটিল কোনো অসুখের কথা বলে তার প্রতি ওই নারীর মন বিষিয়ে তোলা।

অপর কৌশলগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলো ব্যবসার গোপন বিষয়।মিডিয়ায় আমরা এগুলো বলতে পারি না।”

চীনে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন মিলে দলবেঁধে সমস্যাগ্রস্ত নারীদের এ ধরনের সেবা দিচ্ছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

দাই পেং জুন নামে এ ধরনের সেবাদাতা একজনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের অনেক সম্পদশালী ব্যক্তিই স্ত্রীর বাইরে আরেকজন ‘উপপত্নী’ রাখাকে স্বাভাবিক মনে করেন।

চেয়ারম্যান মাও জে দংয়ের আমলে সম্পদশালীদের দীর্ঘদিনের ওই চর্চাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। বিয়ে আইনেও নারীর সমান অধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে ক্ষমতাসীন অনেক কমিউনিস্ট নেতাসহ ধনী ও প্রভাবশালী অনেকে পূর্বপুরুষদের ওই পথে হাটছেন।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি জরিপের ফলে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দণ্ডিত কর্মকর্তাদের ৯৫ শতাংশের এক বা একাধিক ‘প্রেমিকা’ ছিল।