জেরুজালেম থেকে কিইভ, লন্ডন থেকে অটোয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় এবং তার নতুন কর্মসূচির পূর্বাভাস বিশ্ব-নেতাদের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে।
Published : 20 Jan 2025, 10:41 PM
আর কিছুক্সণ পরই ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই বদলে গেছে বিশ্ব পরিস্থিতি।
জেরুজালেম থেকে কিইভ, লন্ডন থেকে অটোয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে টাম্পের জয় এবং তার নতুন কর্মসূচির পূর্বাভাস বিশ্ব-নেতাদের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারীও হয়েছে।
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ মুহূর্তে কোন কোন অঞ্চলে এই পরিবর্তন ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছেন বিবিসি’র সংবাদদাতা:
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি:
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই মধ্যপ্রাচ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কার্যকর করতে তার টীম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাইডেন গত একবছরে যা পারেননি তা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় করতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প নিযুক্ত মধ্যপ্রাচ্যদূত স্টিভ উইটকফ। তার কঠিন চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আগের কিছু অনঢ় অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই চাপ সৃষ্টি করে এসেছে। বাইডেন চেষ্টা করেও নেতানিয়াহুকে চুক্তির জন্য রাজি করাতে পারেননি। আর সে কাজই করে এবার ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করানোর যৌক্তিক ন্যায্যতায় এর কৃতিত্ব দাবি করে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করছেন।
যুক্তরাজ্য: গোপন ‘মিনি-ক্যাবিনেট’
ট্রাম্প এবার আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত হয়ে এবং আরও আগ্রাসী কর্মসূচি নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করতে চলেছেন। কিন্তু ট্রাম্প কী করতে পারেন তা নিয়ে আগে থেকে কিছু বলা এখনও কঠিন।
ট্রাম্পের শাসন ঘিরে সে অনিশ্চয়তার দোলাচল এখনও রয়ে গেছে। তাই তার নতুন মেয়াদের অনিশ্চয়তা নিয়ে যুক্তরাজ্য চিন্তায় আছে। ভবিষ্যতে ট্রাম্প কী কী করতে পারেন আর এর জন্য যুক্তরাজ্য কীভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে তা নিয়ে সেখানে আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারসহ, চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস, পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি এবং বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেনল্ডস গোপন বৈঠক করেছেন। কী কী হতে পারে তা আঁচ করে পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তারা।
একজন সংশ্লিষ্ট সূত্র বিবিসি কে জানিয়েছে, সামনে যা যা ঘটতে পারে তার জন্য খুব বেশি প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি। কারণ, ট্রাম্প কী করবেন ‘তা অনুমান করতে গেলে আপনি পাগল হয়ে যাবেন’। তবে আরেক সূত্র জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে৷
ইউক্রেইন যুদ্ধ- চুক্তির জন্য চাপ:
ইউক্রেইন যুদ্ধে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে এক সেনা মনে করেন, যুদ্ধ কতদিন চলবে তা কেউ জানে না। এমনকি রাজনীতিবিদরাও না। রক্তক্ষয় জলদি থামুক সেটি চান এই সেনা।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চটজলদি কিছু হবে না সেটিও মনে করেন তিনি। এই সেনার মতে, এখন গোলাগুলি থামলে তা হবে কেবল একটি বিরতি। পরে আবার তা শুরু হয়ে যাবে।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে রাশিয়া একটু একটু করে অগ্রসর হয়েই যাচ্ছে। আর ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তিচুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন।
আর এখানেই সবচেয়ে কঠিন সত্যটি হচ্ছে, যদি শান্তিচুক্তি হয়, তাহলে তা ইউক্রেইনের শর্ত মেনে নয়, বরং রাশিয়ার শর্ত মেনে নেওয়ার দিকে চাপ বাড়াবে।
কানাডা - শুল্কের হুমকিতে অস্থিতিশীলতায় নতুন মাত্রা
ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি কানাডায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কিছুদিন আগ পর্যন্তও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার দায়িত্ব নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ট্রুডোর প্রধান ডেপুটি, সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের আকস্মিক পদত্যাগের পর ট্রুডর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফ্রিল্যান্ড ট্রাম্পের হুমকিকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য ট্রুডোকে দোষারোপ করেছিলেন। এক মাসের মধ্যেই ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর চলতি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রুডো।
চীন - বিনিয়োগকারীরা বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে নজর দিচ্ছে
চীনের অর্থনীতিতে ২০২৪ সালে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে পারাটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের হুমকি নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন এজেন্ডা চীনের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও শিল্পক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি চীনের প্রবৃদ্ধির গতিকে হ্রাস করতে পারে।
তবে চীন এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটি অভ্যন্তরীন বাজার সম্প্রসারণ, ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি, এবং নতুন প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তাছাড়া, চীন অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে বিকল্প বাজার খুঁজছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। এ পরিস্থিতি চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভবিষ্যত বাণিজ্যিক সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।