ইউক্রেইনের ৪ অঞ্চল ‘ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়া’ রুশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে বিপর্যয়ে

কিইভবাহিনী রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা লিমান শহরকে কয়েক দিক থেকে ঘিরে ফেলার দাবি করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2022, 11:36 AM
Updated : 1 Oct 2022, 11:36 AM

ক্রেমলিনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেপরোয়া ভ্লাদিমির পুতিন যখন ইউক্রেইনের বিশাল অংশকে নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করার ঘোষণা দিচ্ছেন, মস্কো তার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ বিজয়ী হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কিইভ তখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা লিমান শহরকে কয়েক দিক থেকে ঘিরে ফেলার দাবি করেছে।

রাশিয়া এক গণভোটের ফলকে বিবেচনায় নিয়ে যে ৪ অঞ্চলকে নিজেদের সীমানার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তা ইউক্রেইনের মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আর কখনোই কোনো দেশ এত বড় অংশ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়নি।

যে গণভোটের ফলকে ভিত্তি ধরে রাশিয়া এই পদক্ষেপ নিয়েছে ইউক্রেইন আর তার পশ্চিমা মিত্ররা ওই ভোটকে ‘অবৈধ ও জোরজবরদস্তিমূলক’ অভিহিত করছে; যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এরই মধ্যে মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ চটজলদি যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন জমা দিয়েছে।

পুতিন যতক্ষণ প্রেসিডেন্ট থাকবেন, ততক্ষণ রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়াকে শাসন করা পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেওয়া তার অন্যতম জ্বালাময়ী ভাষণে শুক্রবার তার ভাষায় ‘বৃহত্তর ঐতিহাসিক রাশিয়ার’ জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ধ্বংসের পরিকল্পনার অভিযোগ এনেছেন; ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররাই নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে ছিদ্র করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি তিনি।   

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে ছিদ্র করার ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা। আর এখন রাশিয়া এ নিয়ে ভুল তথ্য ও মিথ্যায় হাওয়া দিচ্ছে।”

ইউক্রেইনের যে ৪ অঞ্চল গণভোট করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছ, সেই দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজিয়ার বাসিন্দাদের প্রসঙ্গে ‍পুতিন ক্রেমলিনের অন্যতম অভিজাত হলে দেওয়া ভাষণে বলেন, “তারা তাদের লোকদের সঙ্গে, তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে থাকা, এর ভাগ্য এবং এর সঙ্গে বিজয়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সত্য আমাদের পাশে। রাশিয়া আমাদের সঙ্গে।”

এই হলেই রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সামনে পুতিন ৪ অুঞ্চলকে যুক্ত করে নেওয়ার নথিতে স্বাক্ষর করেন।

“আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে, সব উপায়কে কাজে লাগিয়ে আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করবো,” বলেন পুতিন। তিনি কিইভের শাসকদের অবিলম্বে ‘বৈরিতা বন্ধ করতে’ এবং আলোচনার টেবিলে ফেরারও আহ্বান জানান।

এর পাল্টায় জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার নতুন কোনো প্রেসিডেন্ট ছাড়া তিনি শান্তি আলোচনায় বসবেন না।

‘সমান, সৎ, মর্যাদা ও ন্যায্যতার শর্তে’ রাশিয়ার সঙ্গে সহাবস্থানের ধারণার পক্ষে এখনও ইউক্রেইন আছে, বলেছেন তিনি।

“স্পষ্টতই, রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এটা অসম্ভব। তিনি মর্যাদা এবং সততা কী তা জানেন না। আমরা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত, তবে অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে,” বলেন জেলেনস্কি।

পুতিন তার ভাষণে বলেছেন, ১৯৪৫ সালে জাপানে দুটি আনবিক বোমা মেরে যুক্তরাষ্ট্র এক নজির সৃষ্টি করেছিল।

তিনি অবশ্য এদিন তার ভাষণে ইউক্রেইনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে সরাসরি কোনো হুমকি দেননি। যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিকবারই তাকে এ ধরনের হুমকি দিতে দেখা গেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, পুতিন ‘উল্টোপাল্টা বললেও’ রাশিয়া ইউক্রেইনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছে, মস্কোকে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেখেনি।

শুক্রবার ইউক্রেইনের ৪ অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার অনুষ্ঠানে ৬৯ বছর বয়সী পুতিনকে ইউক্রেইনের মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হাত মুঠোতে নিয়ে ‘রাশিয়া, রাশিয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নতুন যুক্ত হওয়া অংশগুলো পরিচালনায় এ নেতাদের ওপরই ভরসা করছেন।