রাশিয়ার হুমকির পর চড়ছে গমের দাম

ইউক্রেইনের বন্দরের দিকে যাওয়া যে কোনো বেসামরিক জাহাজ সামরিক হামলার নিশানা হিসেবে বিবেচিত হবে, বৃহস্পতিবার এমনটাই বলেছে ক্রেমলিন।

ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেইনের বন্দরের দিকে যাওয়া যে কোনো জাহাজ সামরিক নিশানা হিসেবে বিবেচিত হবে- রাশিয়ার এমন হুমকির পর থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম চড়তে শুরু করেছে।

কৃষ্ণ সাগর হয়ে নিরাপদে ইউক্রেইনের শস্য রপ্তানি নিশ্চিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি থেকে সোমবার রাশিয়া নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

এরপর টানা তিন রাত ধরে মস্কো ওদেসা ও অন্যান্য শহরে ইউক্রেইনের শস্য কেন্দ্রগুলোতে লাগাতার বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বৃহস্পতিবার রাশিয়া বলেছে, এখন থেকে ইউক্রেইনের বন্দর অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করা যে কোনও জাহাজকে ‘কিইভের শাসকদের সমর্থক’ হিসাবেই দেখা হবে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মস্কো মূলত বেসামরিক জাহাজে হামলা করে দায় ইউক্রেইনের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাডাম হজের।

বেসামরিক জাহাজে হামলার অজুহাতে রাশিয়ার সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে মস্কো ইউক্রেইনের বন্দরগুলোর আশপাশে অনেক বেশি সামুদ্রিক মাইন পেতে রেখেছে, বলেছেন তিনি।

তার এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেমলিনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

রাশিয়া শস্যচুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর বুধবার ইউরোপের স্টক এক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি টনের মূল্য দাঁড়ায় ২৮৪ ডলারে। একই দিন ভুট্টার দামও বাড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রেও বুধবার গমের দাম ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ফের আন্তর্জাতিক ওই শস্যচুক্তিতে ফিরবেন যদি গত বছর চুক্তি হওয়ার সময় রাশিয়া যেসব দাবি জানিয়েছিল, সেগুলো মানা হয়।

এসব দাবির মধ্যে আছে, রাশিয়ার শস্য ও সার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা তোলা এবং রাশিয়ার কৃষি ব্যাংককে বৈশ্বিক পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে ফের যুক্ত করে নেওয়া।

এদিকে টানা তৃতীয় রাতের মতো কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী শহরগুলোতে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত আছে। আকাশপথে এসব হামলায় ওদেসা ও মাইকোলাইভে ২০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

মাইকোলাইভের আঞ্চলিক গভর্নর ভিতালি কিম বলেছেন, আঞ্চলিক রাজধানীতে রুশ হামলায় শিশুসহ ১৯ জন আহত হয়েছে।

একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে হামলা হয়েছে, একটি ভবনের দ্বিতীয় ও সবার উপরের তলার অংশবিশেষ ধ্বংস হয়ে গেছে, বলেছেন তিনি।

মস্কোর হামলায় ওদেসায় একটি ৪ তলা ভবনও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, দাবি কিইভের।

বুধবার রাতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্রাইমিয়াতেও হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটিতে রাশিয়ার নিয়োগ করা কর্মকর্তা সের্গেই আকসিওনভ।

উপদ্বীপটির উত্তরপশ্চিমে চারটি প্রশাসনিক ভবনে ড্রোন হামলা হয়েছে, হামলায় এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে, বলেছেন তিনি।

এ নিয়ে টানা তিন রাত ক্রাইমিয়াতেও হামলা হল। এসব হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ অভিহিত করে এগুলোর জন্য ইউক্রেইনকে দুষছে ক্রেমলিন।

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে শস্য রপ্তানি কেন্দ্রে হামলা এবং ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে বিপদে ফেলার অভিযোগ এনেছেন।

দেশটির কৃষিমন্ত্রী মাইকোলা সোলস্কি বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় ৬০ হাজার টন শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর পাশাপাশি শস্য রপ্তানিতে ব্যবহৃত স্থাপনার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে।

পরে মস্কোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবার থেকে ইউক্রেইনের বন্দর অভিমুখে যাওয়া জাহাজগুলোকে নিশানা হিসেবে এবং ওই জাহাজগুলোতে যেসব দেশের পতাকা থাকবে সেগুলোকে কিইভের শাসকদের সঙ্গী হয়ে ইউক্রেইন সংঘাতে জড়িয়ে পড়া পক্ষ বলে বিবেচনা করা হবে।

বুধবার পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে শস্যচুক্তিকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে কাজে লাগানোর অভিযোগ করেন। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির পথকে ইউক্রেইন ‘যুদ্ধের কাজে’ ব্যবহার করছে বলে আগে অনেকবারই অভিযোগ করেছিল তারা।

নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউক্রেইন চাইলে রেলপথে শস্য রপ্তানি করতে পারে, কিন্তু সেটি সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। এদিকে পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ নিজেদের কৃষকদের রক্ষায় ইউক্রেইনের শস্যের ওপর বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে।

এ সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুরস্ককে শস্য রপ্তানি কাজে ব্যবহৃত জাহাজগুলোকে পাহারায় সামরিক বহর দিতে অনুরোধ করেছেন ইউক্রেইনের সাংসদ ওলেকসি গনচারেনকো।

“সুস্পষ্টতই পুতিনের লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটানো এবং বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম চূড়ায় নিয়ে যাওয়া। এর ফলে উন্নত দেশগুলোতে হয়তো মূল্যস্ফীতি বাড়বে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখা দেবে সামাজিক অস্থিরতা, অনাহার, দেখা দেবে অভিবাসীদের নতুন ঢেউ,” বলেছেন তিনি।