ইউক্রেইন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়া দুই অঞ্চল খেরসন ও জাপোরিজিয়াকে স্বাধীন সার্বভৌম দুটি রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বৃহস্পতিবার তিনি এ সংক্রান্ত দুটি ডিক্রি জারি করেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রপরিচালিত গণমাধ্যম আরটি।
২৯ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত দুই ডিক্রিতে খেরসন ও জাপোরিজিয়া অঞ্চলের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, “স্বাক্ষরের দিন থেকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বীকৃতি কার্যকর হবে।”
এসব নথিতে পুতিন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইনের রীতিনীতি এবং জনগণের সমানাধিকরা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতির উল্লেখ করেছেন।
এই দুই অঞ্চলের পাশাপাশি শুক্রবার পুতিন দনবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করে নেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার আগে আগে তিনি খেরসন আর জাপোরিঝিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনের সেনা পাঠানোর আগে আগে তিনি দোনেৎস্ক আর লুহানস্ককেও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে এই চার অঞ্চলে গত ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তাতে খেরসনে পড়া ভোটের ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশই স্বাধীনতা এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির রুশপন্থি প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জাপোরিজিয়াতেও মোট ভোটারের ৯৩ দশমিক ২৩ শতাংশ স্বাধীনতা ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। আর দোনেৎস্ক পিপলস রিপবালিকে ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ইউক্রেইন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা রুশ বাহিনী ও তার মিত্রদের দখলে থাকা এই চার অঞ্চলের গণভোটকে ‘অবৈধ ও জোরজবরদস্তিপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়ে ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আরটি জানিয়েছে, পুতিন এই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর এ সংক্রান্ত নথিপত্র রাশিয়ার সাংবিধানিক আদালতে যাবে। এরপর রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট দুমা ও উচ্চকক্ষ ফেডারেল কাউন্সিলে এসব চুক্তি অনুমোদিত হতে হবে।
রুশ পার্লামেন্টের সদস্যদের অনুমোদনের আগ পর্যন্ত অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদনের পর পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চার অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার নথিতে স্বাক্ষর করবেন।
ফেব্রয়ারিতে ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর আগে পুতিন কিইভের বিরুদ্ধে মিনস্ক চুক্তি লংঘনের অভিযোগ তোলেন। ২০১৪ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ওই চুক্তিতে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা ছিল ইউক্রেইনের।
ওই দুই অঞ্চল মিলে গঠিত দনবাসের সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ নামে মস্কো। ইউক্রেইন পশ্চিমাদের কোনো সামরিক জোটে যোগ না দিয়ে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে থাকবে এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও চেয়েছিল তারা।
আর কিইভ বলছে, রাশিয়া বিনা উসকানিতে তাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।
৭ মাসের এই সংঘর্ষে রাশিয়া ও তার মিত্ররা এই চার অঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
খেরসন ও জাপোরিজিয়া রুশ বাহিনীর দখলে আসার পর থেকে সেখানকার মস্কোপন্থি প্রশাসনের কর্মকর্তারা অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ভাবনার কথা নিয়মিতই বলে এসেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের সঙ্গে মিলে তারাও রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার গণভোট করে।
আরও পড়ুন: