ইউক্রেইনের রুশ অধিকৃত অংশে গণভোটের পরিকল্পনা, নিন্দা পশ্চিমের

পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া এ পরিকল্পনা ইউক্রেইন যুদ্ধের তীব্রতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2022, 07:37 AM
Updated : 21 Sept 2022, 07:37 AM

ইউক্রেইনের রুশপন্থিদের দখলে থাকা ৪টি অঞ্চলের মস্কো-অনুগত নেতারা রাশিয়ার সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রিত অংশ জুড়ে দিতে গণভোটের পরিকল্পনা করছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া এ পরিকল্পনা ইউক্রেইন যুদ্ধের তীব্রতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউক্রেইন ও তার মিত্ররা এই গণভোটের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

দৃশ্যত সমন্বিত পদক্ষেপে লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার রুশপন্থি নেতারা ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জনগণের মত চেয়ে গণভোট ডেকেছেন।

এই চার অঞ্চল ইউক্রেইনের মোট ভূখণ্ডের ১৫ শতাংশের কাছাকাছি; হাঙ্গেরির আয়তনের প্রায় সমান।

“রাশিয়া তাদের ইচ্ছামতো যা খুশি করুক, কোনোকিছুই বদলাবে না। নিজেদের ভূখণ্ড (শত্রুদের হাত থেকে) মুক্ত করার অধিকার ইউক্রেইনের আছে এবং রাশিয়া যাই বলুক না কেন, আমরা সেগুলো মুক্ত করতেই থাকবো,” বলেছেন ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা।

ক্রেমলিনপন্থি অনেকে এই গণভোটকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি মস্কোর ছুড়ে দেওয়া আল্টিমেটাম হিসেবে দেখছেন। হয় রাশিয়ার ভূখণ্ডগত অর্জন মেনে নাও, নয়তো পারমাণবিক শক্তিধর কারও বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর যুদ্ধে নামো।

“রাশিয়ার ভূখণ্ডে অনধিকার প্রবেশ এমন এক অপরাধ, যা আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে সব শক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়,” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনটাই বলেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যানও।

দখলকৃত অঞ্চলে লড়াইকে ‘রাশিয়ার ওপর হামলা’ হিসেবে দেখাতে পারলে তা মস্কোকে তার ২০ লাখ সেনার শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর রিজার্ভকে জড়ো করার বৈধতা দেবে।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধ না বলে সীমিত আকারে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ অ্যাখ্যা দেওয়া রাশিয়া ইউক্রেইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এতদিন পর্যন্ত নতুন করে সৈন্য সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সলিভান বলেছেন, দখলকৃত অঞ্চলে রাশিয়ার এ ধরনের যে কোনো গণভোটকে ওয়াশিংটন ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ প্রত্যাখ্যান করবে।

পুতিন সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন বলে ওয়াশিংটন ‘অবগত হয়েছে’, তবে তাও রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলায় ইউক্রেইনের সক্ষমতাকে খাটো করতে পারবে না, বলেছেন তিনি।  

দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে ইউক্রেইনের শিল্পসমৃদ্ধ দনবাসের কিছু অংশ ২০১৪ সাল থেকেই মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাশিয়া তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ আগে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।

এই মুহূর্তে রাশিয়ার দখলে আছে দোনেৎস্কের ৬০ শতাংশ; তুমুল লড়াইয়ের পর ধীরস্থিরভাবে অগ্রসর হয়ে মস্কোপন্থি বাহিনী জুলাইয়ে লুহানস্কের পুরো সীমানাই নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়।

তবে সম্প্রতি খারকিভ থেকে পিছু হটা রুশ বাহিনী ওই এলাকায় দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে তাদের রসদ সরবরাহের মূল লাইনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় আগের অর্জনগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে বলে খবর পশ্চিমা গণমাধ্যমের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ফুটেজে ইউক্রেইনীয় বাহিনীকে লুহানস্কের লিসিচ্যাংস্কের ১০ কিলোমিটার পশ্চিমের শহর বিলোহোরিভকায় দেখা গেছে। তবে ওই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

“যুদ্ধক্ষেত্রের এখনকার চিত্র সুস্পষ্টভাবে ইউক্রেইনের সম্ভাবনাই দেখাচ্ছে। রাশিয়ার দিক থেকে আসা ‘সামান্য আওয়াজে’ ইউক্রেইনর অবস্থান বদলাবে না,” বুধবার প্রথম প্রহরে প্রকাশিত ভিডিও ভাষণে গণভোটের পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে এমনটাই বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, তাদের জোট ও এর সদস্যরা গণভোটের ফল মানবেন না এবং রাশিয়া যদি ভোট আয়োজনের পথে অগ্রসর হয় তাহলে ইইউ তাদের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: ইউক্রেইনে রাশিয়ার বর্বরতার শিকার একদল শ্রীলঙ্কান