ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূতের বৈঠকে অগ্রগতির খবর জানিয়েছেন আরব কর্মকর্তারা।
Published : 15 Jan 2025, 06:36 PM
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি নিয়ে একটি চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত একবছরে যে অগ্রগতি করতে পারেননি, তা মাত্র একটি বৈঠকেই করে দেখিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত- এমনটিই অভিমত আরব কর্মকর্তাদের।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের কঠিন চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আগের কিছু অনঢ় অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
শনিবার ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর জেরুজালেম কার্যালয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন উইটকফ। সেখানেই তিনি চুক্তির জন্য নেতানিয়াহুকে প্রয়োজনীয় আপোস করার আহ্বান জানান বলে জানিয়েছেন দুই আরব কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার ‘টাইমস অব ইসরায়েল’কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তারা বলেন, আলোচনার অগ্রগতিতে এ বৈঠক অনেকটাই সফল হয়েছে। বিশেষ করে জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে।
তবে উইটকফ বা নেতানিয়াহুর কার্যালয় কোনও পক্ষই এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় থাকার এই শেষ সপ্তাহে একটি চুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে এ কাজে সমন্বয় করছে ভাবি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত নতুন প্রশাসনিক টিম।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত উইটকফ আলোচনার মূল মঞ্চ ইসরায়েল এবং কাতার দুই জায়গাতেই ভ্রমণ করেছেন।
ট্রাম্পের দূত জিম্মি মুক্তির আলোচনায় অংশ নিতে গত এক সপ্তাহ দোহায় ছিলেন। শনিবার তিনি ইসরায়েলে যান। মধ্যস্থতাকারীরা ২০ জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের অভিষেকের আগেই গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টায় আছে।
জেরুজালেমে নেতানিয়াহু ও উইটকফের বৈঠকের দুই দিন পর সোমবার রাতে ইসরায়েল ও হামাসের আলোচনাকারী দলগুলো মধ্যস্থতাকারীদের জানায়, তারা জিম্মি চুক্তির প্রস্তাব নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছে। এরপর থেকে চুক্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে কাজ করছে দুই পক্ষ।
এদিকে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এখনও তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কারণ গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে ইসরায়েলি পরিকল্পনা না জানা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর বুধবার বা বৃহস্পতিবার যৌথভাবে চুক্তির চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করবে বলে দুই আরব কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন দাবি করেন, অবশিষ্ট ৯৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার চুক্তি ইসরায়েল মেনে নিয়েছে, তবে হামাস এখনও কিছু জানায়নি।
আরব কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বর্তমানে যে তিন ধাপের জিম্মি চুক্তি চূড়ান্ত হচ্ছে, তা গত মে মাসে ইসরায়েলের প্রস্তাবিত প্রস্তাবের মতোই।
"অনেক আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যেত, কিন্তু উভয় পক্ষের কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ভেস্তে গেছে," বলেন ওই আরব কর্মকর্তা।
হামাস যুদ্ধবিরতির একমাত্র বাধা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলও গত কয়েক মাস ধরে আলোচনায় ভেটো দিয়েছে। তবে আরব কর্মকর্তার মতে, উভয় পক্ষই এখন একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে জিম্মি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, চুক্তির তিনটি ধাপ থাকলেও প্রথম ধাপের কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা হবে না।
প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে গাজায় হামাসের হাতে বন্দী থাকা জিম্মিদের একাংশকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। একই সঙ্গে ইসরায়েল গাজা থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের এলাকায় ফেরার সুযোগ দেবে। এমনকি, প্রতিদিন ৬০০ মানবিক ত্রাণ ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেবে।
দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ সময় গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। শত্রুতা স্থায়ীভাবে সমাপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হবে। তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে আটক লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে।
প্রথম পর্বের ১৬তম দিনে আলোচনাকারী দলগুলো দ্বিতীয় ধাপের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা শুরু করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই আলোচনায় গাজার যুদ্ধোত্তর কাঠামো পুনর্নিমান নিয়েও আলোকপাত করা হবে।
বাইডেন প্রশাসন আগেই এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে আসছিল। তবে, নেতানিয়াহু এর বিরোধিতা করে বলে এসেছেন, যতক্ষণ হামাস সক্রিয় থাকবে ততক্ষণ এমন পরিকল্পনা অর্থহীন।