যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষের জন্য হ্যারিস এবং ওয়ালজ দুইজনই শক্তিশালী কণ্ঠ হয়ে উঠতে পারবেন- বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
Published : 07 Aug 2024, 01:13 AM
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস তার রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। তিনি হলেন, মিনেসোটার গভর্নর ও হাইস্কুলের সাবেক শিক্ষক টিম ওয়ালজ।
হ্যারিসের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
সম্প্রতি রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার রানিংমেট জেডি ভ্যান্সকে ‘উদ্ভট’ বলে মন্তব্য করার পর থেকেই জাতীয় পর্যায়ে নজরে আসেন ওয়ালজ। হ্যারিস শিবির তার এই কটাক্ষকে স্বাগত জানায়।
ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রচার শিবির হ্যারিসের রানিং মেট ওয়ালজকে কট্টর-বামপন্থি হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে স্যোশাল মিডিয়ায়।
তারা বলছে, বামপন্থি হ্যারিস আরেক কট্টর বামপন্থিকে রানিং মেট করে আমেরিকার জন্য উগ্রপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি দ্বিগুন জোরাল করলেন। আরও অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং নেতাই ওয়ালজকে কট্টর-বামপন্থি গভর্নর আখ্যা দিয়েছেন।
তবে সাবেক ডেমোক্র্যাটিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতে, হ্যারিসের জন্য ওয়ালজ একেবারে আদর্শ পার্টনার। এক্সে এক পোস্টে ওবামা লিখেছেন, দুইজনেরই এই পদের জন্য অভিজ্ঞতা এবং মূল্যবোধসহ সততা আছে।
ওদিকে, ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এক্সে বলেছেন, ওয়ালজকে তিনি দুই দশক ধরে চেনেন। হ্যারিসের তাকে রানিং মেট হিসাবে পছন্দ করাটাও খুবই ভাল হয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবী মানুষ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষের জন্য হ্যারিস এবং ওয়ালজ দুইজন মিলে শক্তিশালী কণ্ঠ হয়ে উঠতে পারবেন। তাছাড়া, মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রেরও তারা হবেন বলিষ্ঠ রক্ষক।
১০ জন সম্ভাবনাময় প্রার্থীর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে হ্যারিস মঙ্গলবার চূড়ান্তভাবে বেছে নেন ওয়ালজকে।
একনজরে টিম ওয়ালজ:
৬০ বছর বয়সী টিম ওয়ালজ ছিলেন আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য এবং সাবেক হাইস্কুল শিক্ষক। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে তিনি হ্যারিসের জন্য সবচেয়ে কার্যকর সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন।
ওয়ালজ বেড়ে উঠেছেন নেব্রাস্কা রাজ্যের একটি ছোট্ট শহরে। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ছিলেন ফুটবল কোচ এবং মিনেসোটার একটি হাই স্কুলের ইউনিয়ন মেম্বারও।
রিপাবলিকান-পন্থি একটি এলাকা থেকে কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন ওয়ালজ। এভাবে তিনি পল্লী এলাকার ভোটার এবং শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে নিজের আবেদন প্রমাণ করেছিলেন।
গভর্নর হিসাবে উদারপন্থি নীতি নেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রদূত। তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন, শ্রমিকদের জন্য সবেতন ছুটির ব্যবস্থা করার মতো এমন অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন।
গত মাসে এমএসএনবিসি টিভি চ্যানেলে ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার রানিংমেট জেডি ভ্যান্সকে ‘উদ্ভট মানুষ’ বলে মন্তব্য করার পর রাজনীতিতে আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে ওয়ালজ জাতীয় পর্যায়ে অনেক বেশি নজর কেড়েছেন।
১২ বছর ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্য থাকার পর ২০১৮ সালে টিম ওয়ালজ মিনেসোটার গভর্নর নির্বাচিত হন। গভর্নর হিসাবে এখন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদ পার করছেন। বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক গভর্নরস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানও।
ওয়ালজের সোজাসাপ্টা কথা এবং ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র ও রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে তিনি সাড়া জাগাতে পারেন।
করোনাভাইরাস মহামারী এবং ২০২০ সালে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকে ঘিরে মিনেপোলিসে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গা বিক্ষুব্ধ সময়েও ওয়ালজ মিনেসোটার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
যদিও সেই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে তাকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল। দাঙ্গা থামাতে তিনি তখন ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করেছিলেন।
কিন্তু সেই সংকটময় সময় এবং কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে তিনি মিনেসোটায় শক্তিশালী শ্রমবাজারও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বেকারত্বের হার নামিয়ে এনেছিলেন, যা নেমে এসেছিল জাতীয় বেকারত্বের হারেরও নিচে।
বহুদিন ধরে নিঃসন্তান থাকা ওয়ালেজ কথা বলে এসেছেন আইভিএফ (ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার পক্ষে।
৭ বছর ধরে অনেক চেষ্টার পর ওয়ালেজ ও তার স্ত্রী আইভিএফ পদ্ধতিতে দুই সন্তান নিতে সক্ষম হন। এই সংগ্রামের কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন ওয়ালেজ। সেকারণেই আইভিএফ বিরোধী এবং রিপাবলিকানদের যারা এই অধিকারের বিপক্ষে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি এক সোচ্চার কণ্ঠ।
আর একজন গভর্নর হিসাবে ওয়ালজকে সত্যিই অনেকের চেয়ে বেশি ‘অবিচল’ বলে বর্ণনা করেছেন এক ডেমোক্র্যাটিক কৌশলবিদ রঘু ডিভাগুপ্তাপু। তিনি বলেন, “ওয়ালজ খুব ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্বের কেউ না হলেও ধীরস্থির একজন মানুষ। তিনি সত্যই চিন্তাশীল, খুবই পছন্দনীয় একজন মানুষ।”
সূত্র: বিবিসি/সিএনএন।