কর্মীদের নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ

ইসরায়েল এর আগে ইউএনআরডব্লিউএ- এর অন্তত ১২ কর্মীর বিরুদ্ধে গতবছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে চালানো হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2024, 03:28 PM
Updated : 5 March 2024, 03:28 PM

ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) অভিযোগ করে বলেছে, তাদের কর্মীদেরকে আটক এবং নির্যাতন করে হামাসের সঙ্গে এই সংস্থার যোগসাজশ থাকার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করছে ইসরায়েল।

ইউএনআরডব্লিউএ- এর মুখপাত্র জুলিয়েট তোওমা এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, নিষ্ঠুর আচরণ ও নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে ইসরায়েল। গতবছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের এই সংস্থা ও হামাসের জড়িত থাকা এবং এই দুইপক্ষের মধ্যে যোগসূত্রের বিষয়ে জেরা করে এই মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়।”

এর আগে ইসরায়েল জাতিসংঘের এই সংস্থার অন্তত ১২ কর্মীর বিরুদ্ধে গতবছর ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের চালানো হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিল।

তাছাড়া, ইউএনআরডব্লিউএ- এর ১৩ হাজার কর্মীর ১২ শতাংশই হামাসসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য বলেও অভিযোগ করেছিল ইসরায়েল। সেলফোনের ডেটা ও অন্যান্য সূত্র থেকে ১২ কর্মীর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছিল।

এরপর ইউএনআরডব্লিউএ ইসরায়েলের ওই অভিযোগের মুখে ১২ কর্মীর মধ্যে ১০ জনকেই ছাঁটাই করা এবং অন্য দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। সিএনএন ইসরায়েলের অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি।

ইউএনআরডব্লিউএ- এর মুখপাত্র জুলিয়েট তোওমা বলেন, “ইউএনআরডব্লিউএ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে সংস্থাটি সম্পর্কে আরও ভুল তথ্য ছড়াতে নির্যাতনের মুখে বলিয়ে নেওয়া মিথ্যা স্বীকারোক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।”

তবে ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় যে ১২ ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ ইসরায়েল করেছে তাদের স্বীকারোক্তিও আদায় করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তোওমা কিছু বলেননি।

ইউএনআরডব্লিউ- এর অপ্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুদ্ধের সময় গাজায় আটকে রাখা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জন ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী আছেন। তাদের কয়েকজন বলেছেন, তারা মারধর ও হুমকির শিকার হয়েছেন।

ইসরায়েলের কারাগার ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বন্দি গাজা বাসিন্দাদের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে ওই অপ্রকাশিত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এই বাসিন্দাদের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মুক্তি দিয়ে গাজায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল কেরেম সালোম সীমান্ত ক্রসিংয়ে।

ওই প্রতিবেদনেরই একটি কপি হাতে পেয়েছে সিএনএন। ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, ফাঁস হয়ে যাওয়া এই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি তারা।

প্রতিবেদনে যে বন্দিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে মারধর, অনিদ্রা, যৌন নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার হুমকির মুখে থাকার সাক্ষ্য দিয়েছে। ইসরায়েলের কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের কারণে অনেকের মৃত্যু হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন কয়েকজন বন্দি।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রতিবেদনে উল্লিখিত সব নির্যাতনের কথা নিশ্চিত করতে পারেনি সিএনএন। তবে এর আগেও ফিলিস্তিনি বন্দিরা একই ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।

ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের নির্যাতন ও আটক করার বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “আটক অবস্থায় বা জেরার সময় দুর্ব্যবহার করা ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর মূল্যবোধ ও আদেশের লঙ্ঘন। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড একেবারেই নিষিদ্ধ।” বন্দি মৃত্যুর বিষয়ে সামরিক পুলিশ তদন্ত করছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।