যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধে ‘মরতে পারে ৫০০ কোটি’

পরমাণু যুদ্ধের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যত লোক মারা যেতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশি মরবে এর কারণে হওয়া বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 10:38 AM
Updated : 16 August 2022, 10:38 AM

অত্যাধুনিক পারমাণবিক যুদ্ধ এবং এর কারণে বায়ুমণ্ডলে যে সূর্যালোকরোধী আস্তরণ দেখা যাবে, তার প্রভাবে দেখা দেওয়া বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষে প্রায় পাঁচশ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, পরমাণবিক যুদ্ধের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যত জন মারা যেতে পারে, ওই যুদ্ধের কারণে হওয়া বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষে সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যাবে।

রুটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য ছয়টি পারমাণবিক সংঘাতের ক্ষেত্রে কী কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তার একটি ম্যাপিং করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে তা হল, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পুরোদস্তুর পারমাণবিক যুদ্ধ, এতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

জার্নাল নেচার ফুডে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা এমনটাই বলেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

পরমাণু অস্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার পর সৃষ্ট অগ্নিঝড় থেকে বায়ুমন্ডলে কী পরিমাণ গাদ বা কার্বন আস্তরণ প্রবেশ করতে পারে তা হিসাব করেই প্রতিটি সংঘাতের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করা হয়েছে।

গবেষকরা ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চের সমর্থনপুষ্ট একটি জলবায়ু পূর্বাভাসমূলক টুলও ব্যবহার করেছেন, যা তাদেরকে দেশ ধরে ধরে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যের উৎপাদন কেমন হতে পারে সে বিষয়ক একটি ধারণাও দিয়েছে।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ তো বাদ, তুলনামূলক ছোট আকারের পারমাণবিক সংঘাতও বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত-পাকিস্তানের স্থানীয় পর্যায়ের পারমাণবিক যুদ্ধের কারণেও ৫ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক ফসল উৎপাদন আনুমানিক ৭ শতাংশের মতো কমে যেতে পারে বলে ওই গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে; আর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া যুদ্ধে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফসল উৎপাদন কমতে পারে ৯০ শতাংশ।

পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ফসল ব্যবহারের মাধ্যমে বা খাদ্যের অপচয় কমিয়ে সংঘাত পরবর্তী তাৎক্ষণিক ক্ষতি পূরণ করা যাবে কিনা, গবেষকরা তাও খতিয়ে দেখেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা এ সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছান যে, পশু খাদ্য এবং খাদ্যের অপচয় রোধের মাধ্যমে যে সঞ্চয় হবে, তা বড় আকারের যুদ্ধে যে ক্ষতি হতে পারে, তার তুলনায় নগণ্য।

ইউক্রেইনে রুশ আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে এ গবেষণাটি প্রকাশিত হল।

চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার ‘গুরুতর ঝুঁকি’ বিদ্যমান বলে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।

“এসব তথ্য উপাত্ত আমাদের একটি জিনিসই বলছে। পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতেই হবে, এটি কখনোই যেন না হয়,” বলেছেন গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য এবং রুটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের জলবায়ুবিদ্যার অধ্যাপক অ্যালান রোবোক।