একটি পরিবারের মাত্র ৫ জনের ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করতে লাদাখের দুর্গম পাহাড়ের ওপর নির্বাচনী কর্মকর্তারা তৈরি করেছিলেন আলাদা ভোটকেন্দ্র।
Published : 20 May 2024, 08:39 PM
ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে সোমবার। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলেছে ভোটগ্রহণ।
দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি ভোটারের ভোট নিশ্চিত করতে সবরকম ব্যবস্থাই করেছিলেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। একটি পরিবারের মাত্র ৫ জনের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করতে লাদাখের দুর্গম পাহাড়ের ওপর তারা তৈরি করেন আলাদা ভোটকেন্দ্র।
সোমবার এ ভোটকেন্দ্রেই ভোট দিয়েছেন ৫ জন। কর্মকর্তারা ৭ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে এবং সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করে ওই দুর্গম এলাকায় গিয়ে ভোট নিয়েছেন।
গোটা ভারতের মধ্যে লাদাখ এমন একটি কেন্দ্রশাসিত এঞ্চল যেখানে নির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত বরফে ঢাকা লাদাখে তাপমাত্রা মাইনাস থাকে।
এবার সেখানে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৭১ জন ভোটারের জন্য ৫৭৮টি ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হয়। এর মধ্যেই একটি পরিবারের মাত্র পাঁচজনের জন্য তৈরি করা হয় পৃথক ভোটকেন্দ্র। বরফে ঢাকা ওই দুর্গম এলাকায় লেহ জেলার ওয়ারসি গ্রামে তাঁবুতে তৈরি করা হয় কেন্দ্রটি।
পাঁচ ভোটারের ভোট সংগ্রহ করতে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বরফের চূড়া ও দুর্গম রাস্তা দিয়ে গ্রামে পৌঁছান। তাঁবু গরম রাখার জন্য করা হয় হিটারের ব্যবস্থা। ভোটারদের জন্য খাবার এবং পানীয়ের ব্যবস্থাও করা হয়।
পাঁচ ভোটারের একজন ২৩ বছর বয়সী রিনচেন। এই ভোটারের সঙ্গে ভোট দেন তার বাবা-মা এবং দাদা-দাদী।
সিয়াচেন হিমবাহ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের ওয়ারসি গ্রামে সড়কপথে যাওয়া গেলেও সেখানে নেই বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা এবং ইন্টারনেটের সুবিধা।
এমন একটি জায়গায় ভোট দিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন রিনচেন। এবারই প্রথম ভোট দিয়েছন তিনি। তার ভোট পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে বলেই আশা করছেন তিনি।
ভোট দেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রিনচেন বলেন, “উত্তেজনা আর দায়িত্ববোধের এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। আমি ভাবি সরকারকে এখানকার সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানাব।”
বাড়ির কাছে ভোটকেন্দ্র হওয়ার পরও রিনচেনের দাদা-দাদীকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়েছে। দাদা শেরাব তার স্ত্রী লামোকে কাঁধে করে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙেছেন এবং পরে হুইলচেয়ারে ঠেলে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন ভোটকেন্দ্রে।
ভারতে লোকসভার সাত দফা ভোটের পঞ্চম পর্বে সোমবার ছয়টি রাজ্য এবং দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৯টি আসনে হয় ভোটগ্রহণ।
উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৪, মহারাষ্ট্রের ৪৮টির মধ্যে ১৩, বিহারের ৪০টির মধ্যে পাঁচ, ওড়িশায় ২১-এর মধ্যে পাঁচ, ঝাড়খণ্ডের ১৪-র মধ্যে তিনটিতে এ দফায় ভোট হয়।
পশ্চিমবঙ্গের ৪২টির মধ্যে সাতটি আসন— আরামবাগ, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর এবং হুগলিতেও ভোট হয়েছে।
এছাড়া, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি এবং লাদাখের একমাত্র আসনে সোমবার ভোটগ্রহণ হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ ও ২৬ এপ্রিল প্রথম ও দ্বিতীয় দফা এবং ৭ ও ১৩ মে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোট হয়েছে। আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফা ভোট এবং ১ জুনে সপ্তম দফা ভোট হবে। আর ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।